একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক বাংলার সম্পাদক তোয়াব খানের দাফনের দিনক্ষণ তার মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর ঠিক করা হবে। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই ওবায়দুল কবির বাচ্চু।
ওবায়দুল কবির বাচ্চু বলেন, তোয়াব খানের একমাত্র মেয়ে তানিয়া খান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। বিমানের টিকিট পাওয়ার ওপর তানিয়ার দেশে ফেরা নির্ভর করছে।
তোয়াব খানের ছোট ভাই বলেন, ‘ইউনাইটেড হাসপাতাল মরদেহ দুই দিন রাখার সময় পেয়েছি। তানিয়ার পৌঁছানোয় দেরি হলে মরদেহ অন্য কোথাও রাখা হবে। মেয়ে না ফেরা পর্যন্ত দাফন হবে না।’ আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের এক মহীরূহ তোয়ার খান।১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরার রসুলপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম আবদুল ওয়াহাব খান, মাতা মোসাম্মৎ জোবেদা খানম। স্ত্রী হাজেরা খান ডালি। তোয়াব খান পড়াশোনা করেছেন পিএন হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে।
১৯৫৫ সালে দৈনিক সংবাদে পেশাগত জীবন শুরু করেন তোয়াব খান। দৈনিক সংবাদের বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত। তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের বার্তা সম্পাদক ছিলেন ১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে দৈনিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদকের শুরু দায়িত্ব অর্পিত হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকের ওপর। ১৯৭৩-৭৫ সময়কালে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সেক্রেটারি। পরে ১৯৮৭-৯১ সময় পরিধিতে আবারও রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সেক্রেটারি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত। মহাপরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) পরিচালনায় দিয়েছেন সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব। এরশাদ সরকারের পতনের পর আবার দৈনিক বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ১০ মাস।
দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক পদে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে। এদেশের সাংবাদিকতায় পত্রিকার গেট আপ, মেক আপ, বিষয় বৈচিত্র্য আনয়ন, ইস্যু শনাক্তকরণ, যথোচিত ট্রিটমেন্ট, সুযোগ্য সম্পাদনার ক্ষেত্রে তিনি আদর্শ। তাকে রোল মডেল মনে করা হয়। সাংবাদিকতা বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দেন দেশে-বিদেশে, অনেকবার।
ভ্রমণ করেছেন বিশ্বের ৩৪ দেশ। সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার, পদক, সম্মাননা, সংবর্ধনা। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় একুশে পদক, ইন্টারন্যাশনাল হজ হ-তে অন্তর্ভূক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আতাউস সামাদ ট্রাস্ট ফান্ড সম্মাননা, কাজী মাহবুবউল্লাহ-জেবুন্নেসা স্বর্ণপদক, আমিন জুয়েলার্স স্বর্ণপদক ইত্যাদি।
অনেক কৃতি সাংবাদিকের শিক্ষাগুরু, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব তোয়ার খান বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো, জাতীয় প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য।
Leave a Reply