একাধিক নারীর সাথে সম্পর্কের বিষয় জেনে যাওয়াতেই চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন তার স্বামী রেজাউল করিম রেজা।
র্যাব জানায়, ২ বছর আগে তারা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন। কয়েকমাসে আগে রেজার অবৈধ সম্পর্কের কথা জেনে গেলে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়, সে থেকেই জান্নাতুল নাঈমকে হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে রেজাউল।
বুধবার রাতে রাজধানীর পান্থপথের একটি হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয় চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈমা সিদ্দিকার গলাকাটা মরদেহ। এ ঘটনায় তার বাবা শফিকুল আলম বাদী হয়ে রেজাউল করিম ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করেন।
বৃহস্পতিবার চট্রগ্রাম থেকে রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালের অক্টোবরে পরিবারকে না জানিয়ে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পরেও রেজাউল করিমের একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পারে জান্নাতুল নাঈম। এ থেকেই ঝগড়া শুরু হয় তাদের মধ্যে।
এরই মধ্যে জন্মদিন পালন করার কথা বলে জান্নাতুলকে পান্থপথের ওই আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান রেজা। সেখানে নিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার পর কলাবাগান থানায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। র্যাব এ ঘটনার পর থেকে ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং অপরাধীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে জান্নাতুলের মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় রেজাউল। সেই মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জান্নাতুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে রেজাউল। রেজাউলের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২০১৯ সালে তাদের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০২০ সালের অক্টোবরে তারা পালিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করে। পরিবারের অমতে তার সাথে ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তবে বিভিন্ন নারীর সাথে রেজাউলের সম্পর্কের বিষয়ে জান্নাতুল জানতে পারেন। এ নিয়ে তার সাথে প্রতিনিয়ত কথা বাগ-বিতণ্ডা হতো। তারপরও তার সাথে সম্পর্ক রেখে গিয়েছিল জান্নাতুল।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরো জানায়, এরই মধ্যে রেজাউল তার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে জান্নাতুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সে তার ব্যাগে ধারালো চাকু নিয়ে চলাফেরা করতো। গত ১০ আগস্ট জান্নাতুলের জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে পান্থপথে ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট নামক আবাসিক হোটেল নিয়ে যায় রেজাউল। হোটেলে রুমে ঢোকার পরে তাদের মধ্যে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তর্কাতর্কি হয়। তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে রেজা তার সাথে থাকা ব্যাগ থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জান্নাতুলের শরীরে আঘাত করে। পরবর্তীতে জন্নাতুলের গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
র্যাব বলছে, নারী কেলেংকারীতে ২০১৮ সালে একটি ব্যাংক থেকে চাকরি যায় রেজাউলের। ফোনের রেকর্ড থেকে রেজাউলের কুরুচিপূর্ণ মনোভাগ সম্পর্কে ধারণা পায় র্যাব।
হত্যার পর রেজাউল চট্রগ্রাম পালিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে একজন আইনজীবীর সাথে হত্যা মামলা থেকে বাঁচার জন্য আলোচনাও করেন।
Leave a Reply