বাঘ রক্ষায় পিছিয়ে আছে দেশ। এক জরিপে দেখা গেছে, ভারত-রাশিয়াতো বটেই, বাঘ রক্ষায় বাংলাদেশ ভুটান-মিয়ানমারের চেয়েও পিছিয়ে। সুন্দরবনে বাঘ বৃদ্ধির হার মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ। তবে বন বিভাগ বলছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার ভিন্ন পরিবেশে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে। আয়তন অনুযায়ী সুন্দরবন সর্বোচ্চ ২০০টি বাঘ ধারণ করতে পারে। তাই সুন্দরবনের বাঘ দ্বিগুণ করা সম্ভব নয়।
বাঘ রক্ষায় ২০১০ সালে রাশিয়ায় বৈঠক করের ১৩ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। এতে ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার অঙ্গীকার করা হয়।
পৃথিবীতে বাংলাদেশ ছাড়াও রাশিয়া, চীন, ভারত, নেপাল, ভুটানসহ ১৩ দেশে বাঘ টিকে আছে। এরমধ্যে কেবল নোনা পানির জঙ্গলে আবাস বেঙ্গল টাইগারের। সুন্দরবনে কত বাঘ আছে তা জানতে ২০১৪ ও ২০১৮ দুদফা জরিপ করা হয়। এতে সবশেষ জানা যায় সুন্দবনে বাঘ আছে ১১৬টি।
বনবিভাগ বলছে, সুন্দরবনের ৬ হাজার বর্গমাইল এলাকায় প্রতি দশ বর্গকিলোমিটারে একটি পুরুষ ও দুইটি নারী বাঘ চলাচল করতে পারে। বনের খাবার ও আবাসাস্থল হিসেবে এই বন দুইশ বাঘ ধারণ করতে পারে। তাই রাশিয়া সম্মেলনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাঘ দ্বিগুণ করা সম্ভব নয়।
বিশ্বের ৬০ শতাংশ বাঘ কেবল ভারতে। সেখানে ২০১১ সালে ১৭০০ বাঘের সন্ধান মেলে। যা এখন বেড়ে প্রায় তিন হাজার। নেপালে ২০০৯ সালে মাত্র ১২১টি বাঘ ছিলো। যা বেড়ে ২৩৫টি হয়েছে।
এ বছরের মার্চে পূর্ব সুন্দরবনের শরাণখোলা রেঞ্জের ছিটেকটকা খালপাড়ে চারটি বাঘের দেখা মেলে। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপাই রেঞ্জে দেখা যায় মাসহ দুই শাবককে। তাই সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা জানতে শীত মৌসুমে আবারও ক্যামেরা ট্র্যাপিংএ জরিপ শুরুর কথা রয়েছে।
এবারের শীতে সুন্দববনে বাঘ শুমারি অনিশ্চিত। রক্ষা প্রকল্পে ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তবে এখনও অর্থছাড় হয়নি। এ অবস্থায় বাঘের সংখ্যা ছাড়াও বনে নোনা পানি কতটা বাড়ল, এতে বন্যপ্রাণীর স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে কিনা তা জানাও জরুরি। তাই দ্রুত অর্থছাড়ের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
শরাণখোলা রেঞ্জের ছিটেকটকা খাল। এপ্রিলে এর পাড়ে গোলপাতার আড়ালে চোখে পড়ে ৪টি বাঘ। ২৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপাই রেঞ্জে দেখা মিলেছিল দুই শাবকসহ এক বাঘিনীর।
সবশেষ ২০১৮ সালে পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দবনে ৪৯১টি ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের গণনায় বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। একইভাবে অক্টোবরেও হওয়ার কথা শুমারি। বরাদ্দ ছিল প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। তবে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ ছাড়া এখনও অর্থছাড়ই হয়নি।
এ প্রকল্পে দুইশ আধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরা থাকার কথা। জানা হবে- বাঘের শিকার হরিণ ও শুকরের সংখ্যা। এছাড়া ধান-সাগর ও নাংলীতে আগুন লাগা বন্ধে হবে ওয়াচ টাওয়ার। দুর্যোগে বন্য প্রাণী রক্ষায় হবে ১২টি মাটির কেল্লা।
এছাড়া বনে নোনা পানি কতটা বাড়ল, এতে বাঘ, হরিণ, বানর, শুকরসহ বনেপ্রাণীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে কিনা তা জানাও জরুরি। তাই দ্রুত অর্থছাড়ের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
সুন্দরবনে বাঘ-মানুষের সংঘাত প্রায় নিয়ন্ত্রণে। চোরা শিকারিরাও কোণঠাসা। তারপরও গত ৯ বছরে মিলেছে ১২টি বাঘের মরদেহ।
Leave a Reply