দুই দশকের মধ্যে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেনি আফগানিস্তান। দেশটিতে মঙ্গলবার মধ্যরাতের ভূকম্পনে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। পাকটিকা প্রদেশে আহত হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, দুর্গতদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান সরকার।
২০০২ সালের পর থেকে এমন প্রাণঘাতী ভূমিকম্প দেখেনি আফগানিস্তান। আফগান বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রণালয় মৃতদের পরিবারের জন্য এক লক্ষ আফগানি এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার আফগানি ক্ষতিপূরণের কথা ঘোষণা করেছে।
কয়েক দশকের যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ওপর প্রকৃতিও যেন রুষ্ট। তীব্র অর্থসংকটে থাকা দেশটিতে চলছে ভয়াবহ খরা। এরমধ্যেই স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত গোটা দেশ।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাকতিকা ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় খোস্ত প্রদেশ। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাকতিকায়। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল পাকিস্তান সীমান্তের খুব কাছে। খোস্ত শহর থেকে মাত্র ৩১ মাইল দূরে।
ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে ভূপৃষ্ঠের দূরত্ব ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার, বিশেষজ্ঞদের মতে এই কারণেই ধ্বংস হয়েছে এত বেশি। কম্পনের তীব্রতা অনুভূত হয়েছে ৩৭৫ কিলোমিটার দূরে, পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও।
ভারতের কাশ্মীরেও কম্পন অনুভূত হয়। তবে পাকিস্তান বা ভারতে প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। আফগানিস্তানের এই বিপদে পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান দু’দেশই।
প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় শুরুতেই জানা যায়নি হতাহতের সংখ্যা। সময়ের সাথে সাথে ফুটে উঠেছে ভয়াবহতা। বুধবার রাত পেরুনোর আগেই হাজার ছাড়িয়ে গেছে মৃতের সংখ্যা।
পাথর-কাঠে তৈরি বাড়িগুলোর আর কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই। তার মধ্যে সমস্যা বাড়িয়েছে বৃষ্টি।পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে অঞ্চলের ২ হাজার স্থপনা। ভূমিকম্পের সময় ব্যাপকভাবে ভূমিধসের ঘটনাও ঘটে। অনেক জায়গায় বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের নিচে লোকজন আটকে আছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে নিখোঁজদের উদ্ধারকাজ।
ভূমিকম্পের পরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে কাবুলে জরুরি বৈঠক করেন তালেবান সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। দুর্গতদের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে তালেবান সরকার। তালেবানের আহ্বানে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিয়েছে চীন। সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জাতিসংঘ এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নও।
এরআগে, ২০০২ সালের ২৫ মার্চ ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হয় আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় বাঘলান প্রদেশ। সেসময়ও ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণ যায় হাজারের বেশি।
Leave a Reply