রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গত ২২ জানুয়ারি অজ্ঞাত নাম-পরিচয়ের এক ব্যক্তির লাশ পড়ে ছিল। পরে জানা যায়, তার নাম মহির উদ্দিন। তিনি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। ওই ঘটনায় পাওয়া সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, লেগুনা থেকে একটি পাতিল ফেলে দিতে। পরে সেই ফুটেজ পর্যালোচনায় মেলে এক ব্যক্তিকে চলন্ত সেই গাড়ি থেকে ফেলে দেয়ার দৃশ্য। নম্বর প্লেট না থাকায়, তদন্তের সম্বল ছিল পাদানিতে করা লাল রঙ।
পরে এই ক্লু ধরে হত্যা রহস্যের জট খুলতে লেগুনার হেলপার সেজে মাঠে নামেন যাত্রবাড়ী ফাঁড়ির ইনচার্জ, এসআই বিলাল আল আজাদ।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমাদের কাছে মাত্র একটি ক্লু ছিল, তা হলো লাল পাদানিওয়ালা লেগুনা। সেই ক্লু ধরে তদন্ত নামি। তদন্তের স্বার্থে পূর্ব পরিচিত লেগুনাস্ট্যান্ডের এক লাইনম্যানের মাধ্যমে সাইনবোর্ডে গিয়ে নিজের পরিচয় গোপন করে লেগুনার হেলপারের চাকরি নিই। গত ২৩ থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত হেলপারের চাকরি করি। দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে হেলপারের চাকরি করতাম। এভাবে প্রায় ৩০০ লেগুনা চেক করি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কদমতলীর একটি গ্যারেজে নষ্ট অবস্থায় সেই লাল পাদানিওয়ালা লেগুনার সন্ধান পাই। তবে সেখানেও ঘটে আরেক বিপত্তি। লেগুনার চালক অসুস্থতার কারণে গত ২১ জানুয়ারি মালিকের কাছে জমা দিয়ে নিজের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর চলে যান।
বিলাল আল আজাদ বলেন, পরে কদমতলীর সেই গ্যারেজের সূত্রে জানতে পারি, ২২ জানুয়ারি রাতে ওই লেগুনার চালক ছিলেন মঞ্জুর নামে একজন ও তার হেলপার ছিলেন আবদুর রহমান। দুজনের নাম-পরিচয় জানা গেলেও তাদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল, আবদুর রহমান বাসের হেলপারি করছেন। পরে আবদুর রহমানকে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আবদুর রহমানের দেওয়া তথ্যে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সাইনবোর্ড থেকে মঞ্জুরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে রুবেল ও রিপনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা আমাদের কাছে মহিরকে চলন্ত লেগুনা থেকে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিরা মূলত সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। ঘটনার দিন রাতে তারা লেগুনা নিয়ে ছিনতাই করতে বের হয়েছিল। ওইদিন যাত্রাবাড়ীর সাদ্দাম মার্কেট এলাকা থেকে লেগুনায় উঠেছিলেন মহির উদ্দিন। তার কাছ থেকে ৫ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে ফ্লাইওভারের ওপর থেকে ফেলে দেয় আসামিরা। এতে ঘটনাস্থলেই মহিরের মৃত্যু হয়।
২২ জানুয়ারি মরদেহ মেলার পর, মহির উদ্দিনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলেই মেনে নিয়েছিলেন স্বজনেরা। পরে তাদের দিয়ে মামলাও করায় পুলিশই।
এর আগে ২০১৭ সালে ফেরিওয়ালা সেজে একটি হত্যা মামলার সুরাহা করে আলোচনায় এসেছিলেন বিলাল আল আজাদ।
Leave a Reply