করোনাভাইরাস এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। ছড়িয়ে পড়েছে দেশে দেশে। তাই করোনার কবল থেকে বাঁচতে হলে ঘরে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। যারা ঘরে বসে থাকে তাদের তিনবেলার আহার জুটবে কি করে? এই নিয়ে বেশ চিন্তিত নিম্ন আয়ের মানুষজন।
বাংলাদেশের প্রাণিজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস হলো মাছ। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়টি অনুধাবন করেই স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এক জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন- ‘মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ’। মৎস্য সেক্টরের গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে গণভবন লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।
সারা বাংলাদেশে বর্তমানে ময়মনসিংহ ৩৮% মাছ চাষ করে আসে। এরই মধ্যে ত্রিশাল ২২% মাছ চাষ করে আসে তাই ত্রিশালের ধলা কে মৎস শিল্প গ্রাম বলা হয়। করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় মৎস্য ব্যবসায়ীরা কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখে পড়েছে বলে জানা যায়।
ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের ধলা গ্রামে রয়েছে
২ (দুই) শতাধিক হ্যাচারি এন্ড নার্সারি।
এ সকল হ্যাচারি ও নার্সারি থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু ও পোনা উৎপন্ন করা হয়। উৎপাদিত এ রেণু ও পোনা সমূহ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রায় তিন যুগ ধরে গড়ে উঠা এ সব খামার থেকে রেনু পোনা বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছে এসব খামারিরা। এর পাশাপাশি কর্মসংস্থান হচ্ছে এলাকার দরিদ্র পরিবারের লোকজন। এতে করে এ গ্রামের মানুষ তাদের জীবনযাপন উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য হচ্ছে। এ কারণে এই গ্রামটি মৎস্য শিল্প গ্রামে পরিচিত হয়েছে।
এশিয়া সায়েন্টিফিক ফিস হ্যাচারি প্রোপাইটার রফিকুল ইসলাম বলেন- ময়মনসিংহ সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বালিপাড়া ইউনিয়নের ধলা গ্রামে ১৯৮০ সালের পর থেকেই বাণিজ্যক ভিত্তিতে মৎস্য খামার গড়ে উঠে থাকে। তিনি আরো বলেন প্রথমদের সফলো উৎসাহিত হয়ে পরবর্তীতে ব্যাপকহারে আমাদের গ্রামে গড়ে ওঠে খামার। খামার গুলো এখন তাদের অধিক অর্থে উৎপাদনের অন্যতম মাধ্যম হলেও করোনা ভাইরাসের কারণে রেণু ও পোনা উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছে এবং আমাদের প্রত্যেকটি হ্যাচারিতে লছের হাঁড়ি গনতে হবে। এবং কর্মচারীরাও যার যার এলাকায় চলে গেছে এত চরম বিপদে মৎস্য ভাইয়েরা।
ধলা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়- গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির কাছাকাছি গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মৎস্য খামার। খামারিদের দেওয়া তথ্য মতে ধলা গ্রামে রয়েছে ২ (দুই) শতাধিক মৎস্য হ্যাচারি ও নার্সারি।
সারা বাংলাদেশের মানুষ বলে থাকেন, ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধলা গ্রামটি মৎস্য শিল্পের গ্রাম হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। এখান থেকে খামার মালিকদের পাশাপাশি এলাকার মানুষ আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মৎস্য শিল্পে জড়িতদের দাবি, করোনা ভাইরাসের কারণে রেণু ও পোনা বিক্রি বন্ধ হয়ে পড়েছে এতে প্রচুর পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন ব্যবসায়ীরা তাই সরকারি সকল সুবিধা দিতে হবে বলে জানায়।
একজন সফল মৎস্য চাষী জানান, দীর্ঘদিন ধরে ধলার মানুষ মৎস্য চাষ করে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন। মাছের চাষ এভাবে চলতে থাকলে ব্যক্তি পর্যায়ের পাশাপাশি এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা আরো সফল হবে এটাই নিশ্চিত কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে আমাদের।
আশিক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান/ব্যতিক্রম নিউজ
Leave a Reply