যাদের চেহারা সুন্দর ও বিউটি পার্লারে কাজ করে তাদেরকে নাটক সিনেমায় মডেল বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে উঠতি বয়সী মেয়েদের টার্গেট করে ফাঁদে ফেলে। পরে তাদের জোর করে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারন এবং তাদের অভিভাবদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে। এমনকি অনেককে পতিতাবৃত্তিতেও বাধ্য করে।
এমন চক্রের হোতা টিকটকার নুরিতা ওরফে প্রিয়া ওরফে সুরাইয়া (২৩) নামের এক নারীকে আটক করেছে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
উপজেলার হাসনাবাদ মোকামপাড়া এলাকা থেকে সোমবার সন্ধ্যায় ওই নারীকে আটক করেছে বলে জানায় কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির।
বুধবার (২৭অক্টোবর) সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে শাহাবুদ্দিন কবির এসব কথা বলেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই চক্রের মূলহোতাকে আটক করা হয়েছে। একইসাথে নুরিতার ফাঁদেপড়া আর এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
নুরিতার দেয়া তথ্যের বর্ননা দিয়ে ওসি বলেন, “চক্রটি প্রথমে মোবাইল ফোনে টিনেজ তরুনীদের টার্গেট করে তাদের সাথে ম্যাসেজ ও ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরে টার্গেট তরুনীকে টিভি নাটক ও ইউটিউবে মডেল হিসেবে নাটক তৈরী করার জন্য অভিনয় করতে নির্ধারিত স্থানে আসতে বলে। আসার পরে প্রতারক চক্রের লোকজন তাকে একটি সিএনজি অথবা মাইক্রোবাসে তোলে। মডেলের হাতে একটি স্কিপ্ট দেয়া হয়। মডেল স্কিপটি হাতে পেয়ে মনের সুখে পড়তে শুরু করে। ইতোমধ্যে মাইক্রোবাস বা সিএনজিটি একটি অচেনা জায়গায় থামে। সেখানে একটি বাড়ির রুমে নিয়ে যায়। প্রথমে মডেলকে অপহরণ দৃশ্যের অভিনয়ের কথা বলে হাত পা বাঁধে। এরপর অভিনয়ের কথা বলে মডেলকে বিবস্ত্র করে নানান ছবি তোলে। পরে সে ছবি ইন্টানেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে তরুনীর অভিভাবকদের কাছে ফোনে যোগাযোগ করে ও মোটা অংকের অর্থ আদায় করে। টাকা পেয়ে ভুক্তভোগী তরুনীরকে কালো কাপড় দিয়ে চোঁখ বেঁধে অচেনা স্থানে ফেলে রেখে আসে। আর যারা ঠাকা দিতে ব্যর্থ হয় তাদের দিয়ে জোর পূর্বক আটক রেখে দেহ ব্যবসা করানো হয়।”
তিনি আরও বলেন, ‘মডেল বানানোর নামে তরুণীদের ডেকে এনে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করা এক চক্রটি সোনিয়া নামের এক তরুনীকে এভাবে প্রলোভন দেখিয়ে আটক করে। পরবর্তীতে মারধর সহ্য করতে না পেরে আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফোন করে মুক্তিপণের জন্য ৮হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে এনে দেয়। পরবর্তিতে সোনিয়ার মোবাইল ফোন ও তার ব্যবহৃত স্বর্ণালঙ্কার প্রতারক চক্রটি রেখে তাকে চোঁখে কালো চশমা পরিয়ে রাতের অন্ধকারে বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায় ঝোপের মধ্যে ফেলে যায়। সেখান থেকে বাসায় ফিরে পরদিন সকালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এসে অভিযোগ করে।’
থানা পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্রধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ মোকামপাড়া এলাকায় নান্নু মিয়ার মিয়ার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় চক্রের মূল হোতা নুরিতাকে গ্রেফতার করে। পুলিশের অবস্থান টের পেয়ে নুরিতার সহযোগী মারুফ কৌশলে পালিয়ে যায়। মারুফ ও তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশ জানায় নুরিতার নামে পর্নোগ্রাফি আইন, প্রতারণা ,অপহরণ ও মানব পাচার আইনে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ওই নারীর বিরুদ্ধে ঢাকার আশুলিয়া থানায় প্রতারণা মামলা আছে।
Leave a Reply