ঢাকার কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ এলাকায় গার্মেন্টস পোশাক পল্লীর নূর সুপার (টিন শেড) মার্কেটে আগুনের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া ৯৬টি দোকানগুলোতে এখন শুধু কয়লা পরে আছে। প্যান্টের পাইকারী বাজার হিসেবে খ্যাত মার্কেটির পোড়া দোকানগুলো থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে কয়লা হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র। সোমবার বিকেলে সরেজমিন ঘুরে চোখে পরল এমন চিত্র।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল রোববার( ৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার মধ্যে পাইকারী ওই মার্কেটটি বন্ধ করে মালিক ও শ্রমিকরা বাড়ী চলে যায়। এরপর রাত পৌনে ১১টার দিকে মার্কেটের ১ নম্বর গলিতে আগুন দেখতে পায় স্থানীয়রা। আগুন নেভাতে চেস্টাও করে তারা। আগুনের লেলিহান শিখা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। এর ফাঁকে যে কেউ ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেয়। ততক্ষনে ১নম্বর গলি ছাড়িয়ে আগুন চলে যায় ২ ও ৩ নম্বর গলিতে। ইতোমধ্যে আধঘন্টা পার হয়ে রাত তখন সোয়া ১১টা। ফায়ার সার্ভিস আসে । এক এক করে ১০টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। দোকানের সরু রাস্তায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী ঢুকতে না পারায় আলম মার্কেটের গলিতে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী গুলো রাখা হয়। চলতে থাকে ফায়ারম্যান ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নেভানোর চেস্টা । কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে আগুন। এরপর শুরু হয় বৃষ্টি । ফায়ার সার্ভিস আর বৃষ্টিতে আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। তখন সময় পার হয়ে গেছে দু’ঘন্টা । আগুনে ততক্ষনে পুড়ে ছাই করেছে ৯৬টি দোকানের সব মালামাল।
আরিয়ান নামের এক দোকান কর্মচারী জানায়,অধিকাংশ দোকানদার আবদুল্লাপুর ও বিক্রমপুর এলাকায় বসবাস করেন। প্রতিদিনের মতো দোকানদারী শেষে তারা রাতে বাসায় ফিরে গিয়েছিলেন। আগুনের খবর পেয়ে আবার প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে কালীগঞ্জ ফিরে এসেছিলেন। এসে দু ’একজন নিরাপদে মালামাল সরাতে পেরেছেন। বাকিরা শুধুই আগুন নেভাতে সহযোগিতা করছেন। এর ফাঁকে কিছু দুস্ট লোক অনেক দোকানের মালামাল চুরি করেছেন বলেও জানান তিনি।
বাঁশ,কাঠ আর টিনের তৈরী ছিলো দোকানগুলো। তাই বেশী সময় লাগেনি আগুন ছড়িয়ে পরতে। জানা গেছে দোকানগুলোতে তেমন আগুন নেভানোর যন্ত্র বা সরঞ্জাম ছিলোনা। আর যদিও একটু আধটু থাকে তা আবার মার্কেট বন্ধ থাকার কারনে ভিতরেই আটকে ছিলো।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সে ( অপারেশন এন্ড মেইনটেনেন্স )এর ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের দু’ঘন্টা চেস্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে।এখানে প্রায় ১ হাজার দোকান রয়েছে। দোকানগুলো সব টেম্পোরারী বাস কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরী। এরকম এক দোকানে যদি কোন প্রকার আগুন বা সর্ট সার্কিট হয় তাহলে বাকি দোকান গুলোতে এমনেতেই আগুন লেগে যাবে। দোকান গুলোতে অগ্নি নির্বাপনের তেমন ব্যবস্থা নেই।
তিনি আরো জানান, প্রায় শতাধিক দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। আমরা ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে আগুন লাগার কারন জানা যাবে ।
অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেলে অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু(এমপি)। এসময় তার সাথে ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক মুসলিম ঢালী জানান, রাতে দোকান বন্ধ অবস্থায় থাকায় ক্ষতির পরিমান বেশী হয়েছে। আমরা সমিতির সদস্যরা শেষ পর্যন্ত আগুন নেভাতে সাহায্য করেছি। প্রতিটি দোকানে ১০ লক্ষ টাকার অধিক মালামাল ছিলো। আগুনে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে যে সকল দোকান মালিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের আমরা সমিতির পক্ষ থেকে সহায়তা করবো। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার জন্য সরকারের সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তিনি।
Leave a Reply