ডেস্ক নিউজ:সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে জুমা পড়ার নির্দশ দিয়ে বলেন-یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَহে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)
খুতবার গুরুত্ব ও বিধিবিধানখুতবার শাব্দিক অর্থ বক্তৃতা বা বক্তব্য দেওয়া। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় খুতবা বলা হয় এমন বক্তৃতা, যাতে আল্লাহর প্রশংসা, তার একত্ববাদের ঘোষণা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরুদ এবং উপস্থিত সাধারণের প্রতি উপদেশ বিদ্যমান থাকে।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর কুবার মসজিদে প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন। এ নামাজে তিনি নিজেই ইমামতি করেন। এদিন জুমার নামাজের আগে তিনি দুটি খুতবা প্রদান করেন। তখন থেকেই শুক্রবারে জুমার নামাজের জামাতের আগে দুটি খুতবা প্রদানের প্রথা প্রচলিত।
জুমার নামাজের আগে খুতবা পাঠ নামাজেরই অংশবিশেষ। তাই খুতবা আরবিতে পাঠ করতে হয়। তবে খুতবা পাঠের আগে ইমাম সাহেবরা মাতৃভাষায় খুতবার মূল বক্তব্যটুকু বলে দিলে সবাই খুতবার সারমর্মের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী হতে পারবে।
জুমার দিনের আলোচ্য বিষয় জুমার দিন মসজিদে অনেক মানুষের সমাগম হয়, তাই এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জুমার খুতবার আগে সমাজে প্রচলিত অন্যায়-অবিচার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মাদকাসক্তি, মজুতদারি, কালোবাজারি, মুনাফাখোরি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি সামাজিক অনাচার ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অথবা গরিব-মিসকিন, অনাথ আত্মীয়স্বজন, অভাবগ্রস্ত পাড়া-প্রতিবেশী, অভুক্ত অনাহারী ও আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসতে সামর্থ্যবানদের সহযোগিতার দিকনির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণীর সঠিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আদর্শ জাতি গঠনে ও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন খতিব সাহেবরা।
খুতবার সময় করণীয়খুতবা জুমার নামাজের শর্ত বা ফরজ। খুতবা ছাড়া জুমার নামাজ হয় না। উপস্থিত মুসল্লিদের জন্য খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। তাই খুতবা চলাকালে নিরর্থক কাজে মশগুল থাকা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিন খুতবা প্রদানের সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে বলো, ‘চুপ করো’ তখন তুমি অনর্থক কথাই বললে। (বুখারি)এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব এবং কথাবার্তা বলা হারাম। তাই মুসল্লিদের উচিত খুতবার সময় কথাবার্তা থেকে বিরত থেকে অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে খুতবা শ্রবণ করা এবং যেসব কাজ নামাজে নিষিদ্ধ তা থেকে বিরত থাকা।
ফাতাওয়ায়ে শামিতে একটি মূলনীতি উল্লেখ হয়েছে, যেসব কাজ নামাজের মধ্যে হারাম, তা খুতবা চলাকালীন সময়ও হারাম। যেমন- কথাবার্তা বলা, পানাহার করা ইত্যাদি। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৩/৩৫)
বর্তমানে অনেক মসজিদে দেখা যায়, খুতবা চলাকালে অনেক মুসল্লি নামাজবিরোধী কর্মে লিপ্ত হয়, যা সম্পূর্ণ শরিয়ত পরিপন্থী এবং হারাম। এছাড়া অনেক মসজিদে খুতবা চলাকালে চাঁদার বাক্স চালানো হয়, এটা শরিয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়েজ। খুতবার সময় এসব নাজায়েজ কর্ম পরিহার করে মনোযোগী হয়ে খুতবা শোনা অত্যন্ত জরুরি।
আল্লামা কাসানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উল্লেখ করেন, জুমার খুতবা দুইটি হওয়া সুন্নত এবং খুতবা মিম্বরে দেওয়া সুন্নত। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করতেন। হজরত জাবের ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুইটি খুতবা পাঠ করতেন এবং উভয় খুতবার মাঝখানে বসতেন। তিনি কোরআন তেলাওয়াত করতেন এবং লোকদের উপদেশ দিতেন। ‘ (মুসলিম ১/২৮৩)
যেহেতু খুতবা শোনা ইবাদত এবং জুমার অপরিহার্য অংশ। তাই মুসল্লিদের এ সম্পর্কে জানতে হবে। খুতবার মান বাড়াতে হবে। যে বিষয়ে খুতবা প্রদান করা হবে, সে বিষয়সম্পৃক্ত আয়াত, হাদিস সবিস্তারে তুলে ধরতে হবে। এ বিষয়ে খতিবদের প্রশিক্ষিত ও খুতবাকে সমৃদ্ধ করে এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নীতিনির্ধারকদের সচেতন হওয়া জরুরি।
মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি জুমার দিনের নেয়ামত পাওয়ার চেষ্টা ও দোয়া করা। দুনিয়া ও পরকালের জীবন নেয়ামতে পরিপূর্ণ করে দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দিনব্যাপী ইবাদত-বন্দেগি করা।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে বেশি বেশি জুমার দিন আমল ইবাদতে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply