রাজবাড়ী সংবাদদাতা: রাজবাড়ীতে চলতি মাসে পরপর ৫ টি হত্যাকান্ডের বর্ননা ও অগ্রগতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করছেন জেলা পুলিশ। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে ৫ টি হত্যান্ডের ঘটনা ঘটে।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মোছাঃ শামীমা পারভীন বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর পাংশা থানার বিলমন্ডব এলাকার রতন খাঁ তার স্ত্রী চামেলীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার চেষ্টা করে। সে ১৬৪ ধারায় ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ ব্যাপারে পাংশা মডেল থানায় চামেলী বেগমের বাবা মোঃ আঃ মালেক মন্ডল বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের হয়।
গত ২০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে কালুখালী থানার মাধবপুর এলাকায় ট্রান্সফরমার চুরি করে পালানোর সময় জনগণ নাজমুল মোল্লাকে পিটিয়ে আহত করে হাসপাতালের গেইটে ফেলে রেখে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে তার স্ত্রী আন্না বেগম বাদী হয়ে কালুখালী থানায় মামলা দায়ের করেন। নাজমুল মোল্লার নামে ডাকাতির প্রস্তুতি ৩টি, চুরি ৬ টি সহ ১১টি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় ভিডিওধারনকারী মূলব্যক্তি সালাম দরিকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার সময় একদল দুর্বৃত্ত গোয়ালন্দে সুশীল সরকারকে কুপিয়ে ও গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তার নামে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যাসহ অস্ত্র আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। নিহতের ভাই সুনীল সরকার বাদী হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় মামলা দায়ের করে। এ ঘটনায় গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ জনি নামে একজনকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজবাড়ী সদর থানার রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাটিপাড়া এলাকায় রশিদ তার স্ত্রী বন্যাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। রশিদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় রশিদ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। এ ব্যাপারে রাজবাড়ী সদর থানায় নিহত বন্যার বড় ভাই মোঃ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী সদর উপজেলার পুর্ব ভবদিয়া গ্রামে মিনহাজ শেখ নামে একজন ১২ বছরের শিশুকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত সোমবার রাতে মিনহাজ শেখের বাবা আজাদ শেখ থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করেন। পরদিন মঙ্গলবার সকালে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। মিনহাজ শেখ পার্শ্ববর্তী এলাকার মুক্তার সর্দারের বাগানের মাল্টা খাওয়ার লোভে বাগানে প্রবেশ করতে যায়। কিন্তু মুক্তার সর্দার তার বাগান কাঁটা তারের বেড়া ও বিদ্যুতায়িত করে রাখে। শিশুটি সেই বাগানের বেড়ার বিদ্যুতের তারের সাথে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যায়। পরে মৃতদেহ মুক্তার সর্দার ও তার সহযোগীরা ধান ক্ষেতের মাঝখানে ফেলে রেখে দেয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে বাগানের মালিক ও দারোয়ানের বিরুদ্ধে আজাদ শেখ বাদী হয়ে রাজবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছে। আসামীরা পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজবাড়ীতে যোগদানের পর থেকে সব স্থানে টহল জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি৷ স্বাভাবিক রাখতে জেলা ও থানা পুলিশ তাদের কর্মতৎপরতা বাড়িয়েছেন। এছাড়া সাধারণ জনগণকেও সচেতন হতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে মসজিদ, মন্দির ও ওয়াজ মাহফিলে মানুষকে সচেতন করতে হবে জানান তিনি।
প্রেস ব্রিফিংকালে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ ইফতেখারুজ্জামানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
K/H
Leave a Reply