যেভাবে গড়ে উঠেছিল প্রথম শহীদ মিনার
-
সর্বশেষ আপডেট :
বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক: ভাষা শহীদদের স্মরণ করে নির্মিত শহীদ মিনার কবে কোথায় কে বা কারা নির্মাণ করে ছিল উইকিপিডিয়া থেকে তথ্য নিয়ে বা সেসময়কার সংগ্রামে অংশ নেয়া গুনীজনদের কাছ থেকে জেনে অনেক মিডিয়া জানায়,
উনিশশো বাহান্নো সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যে স্থানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন রফিকউদ্দিন, সেখানেই ২৩শে ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার।
ভাষা সংগ্রামী ও জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে বলছেন, ২১ তারিখের পর ২২, ২৩ তারিখেও শহরময় গোলমাল চলছিল।
“এর মধ্যে মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা পরিকল্পনা করেছিলেন, একুশের প্রথম শহীদ যেখানে শাহাদত বরণ করেছেন, রফিক উদ্দিন, সেখানে তারা একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করবেন,” বলেন অধ্যাপক ইসলাম।
শহীদ মিনার ভাষা শহীদদের উদ্দেশে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে এই স্তম্ভ নির্মিত হয়, যা বর্তমানে ‘শহীদ মিনার’ নামে পরিচিত।
শহীদ মিনার প্রথম নির্মিত হয় ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। এর পরিকল্পনা, স্থান নির্বাচন ও নির্মাণকাজ সবই ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের উদ্যোগে সম্পন্ন হয়। বর্তমান শহীদ মিনারের পূর্ব—দক্ষিণ কোণে শহীদদের রক্ত ভেজা স্থানে সাড়ে ১০ ফুট উঁচু এবং ৬ ফুট চওড়া ভিত্তির ওপর ছোট স্থাপত্যটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এর গায়ে ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ লেখা একটি ফলক লাগিয়ে দেওয়া হয়। নির্মাণের পরপরই এটি শহরবাসীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে; প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রতীকী মর্যাদা লাভ করে। এখানে দলে দলে মানুষ এসে ভিড় জমায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন। ওই দিনই বিকেলে পুলিশ হোস্টেল ঘেরাও করে এটি ভেঙে ফেলে।
প্রথম নির্মিত শহীদ মিনারটি এভাবে ভেঙে ফেললেও পাকিস্তানি শাসকরা শহীদের স্মৃতি মুছে ফেলতে পারেনি। সারা দেশে, বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে অনুরূপ ছোট ছোট অসংখ্য শহীদ মিনার গড়ে ওঠে এবং ১৯৫৩ সাল থেকে দেশের ছাত্র—যুবসমাজ একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিকে ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করতে থাকে। মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের শূন্য স্থানটিতে লাল কাগজে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের অবিকল প্রতিকৃতি স্থাপন করে তা কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়। সেই প্রতীকী শহীদ মিনার থেকেই সে বছর ছাত্রদের প্রথম প্রভাতফেরি শুরু হয়। পরের বছরও ছাত্ররা একইভাবে শহীদ দিবস পালন করেন।
১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে ৯ মের অধিবেশনে একুশ দফার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শহীদ মিনার তৈরি, একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে বটে, কিন্তু ওই বছর ৩০ মে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় তা আইনসিদ্ধ করা সম্ভব হয়নি।
১৯৫৬ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পূর্ববঙ্গ সরকারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং ভাষা শহীদ আবুল বরকতের মা হাসিনা বেগম। সে সময়ই একুশে ফেব্রুয়ারিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আপনি সংবাদটি শেয়ার করুন
এই বিভাগের আরো সংবাদ
Leave a Reply