রাঙ্গাবালী: বঙ্গোপসাগরের বুকে ভাসমান দোকান। বিস্ময়কর এই দোকানে পাওয়া যায় চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, জ্বালানি ও ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু। জেলেদের ভরসা এই সমুদ্র দোকান। এছাড়া সোনার চর ও হেয়ার দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও শখ করে কেনাকাটা করেন এই দোকানে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, সাগর মোহনায় নোঙর করা স্টিলের তৈরি সারি সারি ট্রলার। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যাত্রাবিরতির জন্য নোঙর করে আছে ট্রলারগুলো। কিন্তু এগুলো কোনো যাত্রীবাহী কিংবা মাছ ধরার ট্রলার নয়। সমুদ্রের বুকে ভাসমান দোকান, যেখান থেকে কেনাকাটা করেন বঙ্গোপসাগরের জেলেরা। এই দোকানে পাওয়া যায় চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, মরিচ, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য। এছাড়া রয়েছে জেলেদের প্রয়োজনীয় জ¦ালানি তেল, মবিল, টর্চলাইট, রশি, সুতা ও রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আছে জরুরি ওষুধও।
জেলেরা জানান, এক থেকে দুই সপ্তাহের জন্য মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে ঘাট থেকে ছেড়ে বঙ্গোপসাগরে যান জেলেরা। সমুদ্রে থাকাকালে প্রয়োজনীয় সবকিছুই নিয়ে যান তারা। তবে সমুদ্রে মাছ শিকারকালে ট্রলারের জ¦ালানি তেল ফুরিয়ে গেলে কিংবা কোনো রসদসামগ্রী ফুরিয়ে গেলে, তখন এখান থেকেই কিনতে পারেন সব ধরনের জিনিসপত্র। হঠাৎ প্রয়োজনীয় জিনিস শেষ হয়ে গেলে কেনার জন্য ফিরতে হয় না ঘাটে। হাতের কাছেই পাওয়া যায় সবকিছু। এতে করে জেলেদের সময় যেমন বাঁচে, সাশ্রয় হয় জ¦ালানিও। তাই ভাসমান দোকানকে আশীর্বাদ হিসেবে নিয়েছেন জেলেরা।
ভাসমান দোকানে কথা হয় দোকান মালিক কামাল মৃধার সঙ্গে। তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে এই দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলেই জমজমাট হয়ে ওঠে দোকানগুলো। সমুদ্রে জাল ফেলে জেলে ট্রলার এসে নোঙর করে ভাসমান দোকানের কাছে। চা এবং পান খেতে আড্ডা দিয়ে সময় পার করেন তারা।
জেলেরা ছাড়াও এই দোকানের ক্রেতা সোনার চর ও হেয়ার দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। শখ করে অনেক পর্যটকই ভাসমান এই দোকানে কেনাকাটা করেন।
বছর পাঁচেক আগে জেলেদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এমন উদ্যোগ নেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী। সাগরের মোহনা সোনারচর ও চর হেয়ারের মাঝামাঝি স্থানে নোঙর করে রাখা হয় ভাসমান এই দোকানগুলো। বর্তমানে এখানে ছয়টি দোকান রয়েছে।
মৎস্য ঘাট থেকে সমুদ্রের দূরত্ব ৪০ থকে ৫০ কিলোমিটার। সমুদ্র থেকে উঠে তীরে এসে কোনো কিছু কিনতে হলে জেলেদের আসা-যাওয়ায় সময় লাগে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। তাই সমুদ্র মোহনার ভাসমান দোকান থেকে খুব সহজেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য কিনে নেন জেলেরা।
ভোরের কাগজ পত্রিকা থেকে নেয়া
Leave a Reply