অনলাইন ডেস্ক: ৪৫ বছরে এই প্রথম ইউনেস্কো বিশ্বের ঐতিহ্য তাজমহলের দেয়াল স্পর্শ করেছে বন্যার পানি। তলিয়ে গেছে স্মৃতিসৌধটির পেছনের একটি বাগান।
‘শুধু থাক/একবিন্দু নয়নের জল’- ‘শাহজাহান’-এর তাজমহলকে নিয়ে লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নোবেলজয়ী এই বাঙালি কবি অন্যত্র লিখেছেন, এই তাজহমল সৃষ্টি হয়েছিল ‘শাজাহানের বিরহশোক দিয়ে’। ‘ভারত-ঈশ্বর’ সম্রাট শাহজাহানের সেই ‘একবিন্দু নয়নের জল’কে ছুঁয়েছে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বানের জল। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪৫ বছরে এই প্রথম তাজমহলের গা ছুঁল উত্থিত যমুনা।
সিএনএন গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগ্রায় ঐতিহাসিক এই স্মৃতিসৌধের পেছনে একটি বাগানও বানের জলে ডুবে গেছে। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির ভারতীয় সহযোগী সংবাদমাধ্যম সিএনএন-নিউজ এইট্টিন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বন্যার বাড়তি কোনো ঝুঁকিতে তাজমহল নেই বলে জানিয়েছে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার পানি তাজমহলের দেয়াল ছোঁয়ার ঘটনা কিছুটা বিরল বটে। উত্তর প্রদেশের আগ্রায় সপ্তদশ শতাব্দীতে এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহান। তার স্ত্রী সন্তান প্রসবকালে মারা যান। সেই মমতাজ মহলের নামেই এই স্মৃতিসৌধের নামকরণ করা হয় তাজমহল।
ভারতে বর্ষা মৌসুমে বন্যা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বরে বন্যার হার ও তীব্রতা বাড়িয়ে তুলছে জলবায়ু পরিবর্তন।
ভারতে যমুনা নদীর পানির উচ্চতা গত সপ্তাহে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় বন্যায় মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
হিমালয় থেকে কয়েকটি রাজ্য হয়ে ১৩৭৬ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রবাহিত হয় যমুনা। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এর পানির উচ্চতা দাঁড়ায় ২০৮ দশমিক ৫৭ মিটার (বা ৬৮৪ ফুট)।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ ভারত। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকারি পরিষদ (আইপিসিসি) বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি ভারত। দেশটির ১৪০ কোটি মানুষের ওপর জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব পড়ছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, আগ্রাসহ উত্তর ভারতের বেশ কয়েকটি অঞ্চল এখনো বন্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। কেননা, এখনো অবিরত ভারী বর্ষণ হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বেশ আগে থেকেই সতর্ক করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কে আর কান দেয় পণ্ডিতের পূর্বাভাসে, যতক্ষণ না পানি এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সবকিছু কিংবা আগুন না লাগে গায়ে আর ঘরে!
নাসার জলবায়ু বিজ্ঞানী পিটার কালমাস সিএনএনকে বলেছেন, ‘জলবায়ু যে ঠিক হয়ে যাবে, এমন কোনো লক্ষণ দূর ভবিষ্যতেও চোখে পড়ছে না। এই গ্রীষ্মের বাকিটা সময় আমরা আরও কঠিন পরিস্থিতি দেখতে পাব। অনাগত প্রতিটি গ্রীষ্মই সর্বশেষ বিদায়ী গ্রীষ্মগুলোর থেকে আরও বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠবে। কোটি কোটি জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মুক্ত নয় তাজমহলও। বায়ুদূষণ, পোকামাকড় আর পর্যটকদের ভিড় তো সহ্য করেই যাচ্ছে এটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একে দেখেছিলেন ‘কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল’ হিসেবে। কিন্তু হালে এই স্মৃতিসৌধের বাইরের দেয়াল বিবর্ণ হয়ে হলুদ-সবুজাভ হয়ে পড়েছে। নয়নের জলের সঙ্গে যমুনার জল মিলে গিয়ে তাজমহলের বিবর্ণতার ঝুঁকি আরও বাড়ল বৈকি।
Leave a Reply