নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু পণ্য ও সেবার ওপর শুল্ক কর এবং ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে ওই সব পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ হলো এলপিজি সিলিন্ডার, মোবাইল ফোন, সিগারেট, ফ্ল্যাট নিবন্ধন, বিদেশ ভ্রমণ প্রভৃতি।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেন। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
এবারের বাজেটে যেসব পণ্য ও সেবার দাম বাড়ছে তার অন্যতম হলো-
এলপিজি সিলিন্ডার: রান্নার কাজে ব্যবহৃত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত স্টিল ও ওয়েল্ডিং ওয়্যার আমদানিতে শুল্ক আরোপ এবং উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে বাজেটে। এর ফলে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়তে পারে।
মোবাইল ফোন: প্রতি বছর মোবাইলফোন পাল্টানো ফ্যাশনের অংশ, যা শখে পরিণত হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে আইএমএফ-এর পরামর্শে মোবাইলফোনকে বিলাসীপণ্য বিবেচনায় নিয়ে বাজেটে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইলফোন উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি আছে, সেখানে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। আর সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে মোবাইলফোনের দাম বাড়তে পারে।
গৃহস্থালি সামগ্রী: বাজেটে প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী উৎপাদনে থাকা ৫ শতাংশ ভ্যাটকে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। একইহারে বাড়ানো হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালি সামগ্রী ও তৈজসপত্রের (হাঁড়িপাতিল, থালাবাসন) ভ্যাট। কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে টিস্যু পেপারের দাম বাড়তে পারে। হরে বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত বাড়িতে খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করা হয়।
শুল্ক ফাঁকি রোধে বাজেটে সব ধরনের মাইক্রোওয়েব ওভেন আমদানির শুল্ক ৩০ শতাংশ বাড়াচ্ছে। এর ফলে মাইক্রোওয়েব ওভেনে মোট করহার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ হচ্ছে। এতে বিদেশি গৃহস্থালি পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
বাসমতি চাল: রসনা বিলাসে বিরিয়ানি-তেহারির প্রধান উপকরণ বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে চালের দাম বাড়তে পারে। বাসমতি চালের দাম বাড়ায় বাড়তে পারে বিরিয়ানি কিংবা কাচ্চির দামও।
নির্মাণসামগ্রী: বাড়ি নির্মাণের প্রধান উপকরণ সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানিতে বর্তমানে টনপ্রতি ৫০০ টাকা শুল্ক আছে, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হচ্ছে। এ কারণে সিমেন্টের দাম বাড়তে পারে। বিদেশি টাইলস আমদানিতে এতদিন কর রেয়াত ছিল, যা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ কারণে বিদেশি টাইলসের দাম বাড়তে পারে।
ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ) এলাকায় জমি নিবন্ধনের ট্যাক্স বিদ্যমান ৩ শতাংশ ও ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে যথাক্রমে ৪ শতাংশ ও ৫ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া ফ্ল্যাট বিক্রিতে বিদ্যমান গেইন ট্যাক্স বাড়তে পারে। ফলে আগামী অর্থবছর থেকে উভয় ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ গুণতে হবে।
কলম: কলম উৎপাদনে বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে কলমের দাম বাড়তে পারে।
সিগারেট: বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের (যেমন-হলিউড, ডার্বি) দাম ৯০ টাকা, মধ্যমস্তরের (স্টার, নেভি) ১৩৪, উচ্চস্তরের (গোল্ডলিফ) ২২৬ এবং অতি উচ্চস্তরের (বেনসন, মালবোরো) সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে জর্দা-গুলের দামও। তবে বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
বিদেশি ফল: দেশে কাজুবাদাম চাষকে উৎসাহিত করতে এ ফলটি আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই আমদানি করা কাজু বাদামের দাম বাড়তে পারে। বাজেটে তাজা ও শুকনা খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এর ফলে বেড়ে যাচ্ছে বিদেশি এ ফলটির দাম। বাজেটে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করায় অন্যান্য বিদেশি ফলের দামও বাড়তে পারে।
চশমা: চশমার ফ্রেম ও সানগ্লাস আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে সব ধরনের চশমার দাম বেড়ে যেতে পারে।
বিদেশ ভ্রমণ: ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাড়তি করের চাহিদা মেটাতে বিদেশগামী যাত্রীদের ওপর ৩০০-৫০০ টাকা বাড়তি কর আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। এতে বিদেশে যাওয়া-আসা খরচ বেড়ে যেতে পারে। তবে হজ কিংবা চিকিৎসার জন্য যারা বিদেশ ভ্রমণ করবেন, তারা আগের মতোই কর সুবিধা পাবেন।
Leave a Reply