নিজস্ব প্রতিবেদক:ভোক্তা পর্যায়ে বেসরকারি কোম্পানির তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১১৭৮ থেকে ৫৭ টাকা বাড়িয়ে ১২৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম আগের ৫৯১ টাকাই রয়েছে। যদিও এই এলপিজি সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন দর ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান মো. নূরুল আমিন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য কামরুজ্জামান, ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, ড. মো. হেলাল উদ্দিন, আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান, বিইআরসির সচিব ব্যারিস্টার মো. খলিলুর রহমান খান প্রমুখ।
কমিশনের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, নতুন এই দর আজ সন্ধ্যা থেকেই কার্যকর হবে। এলপিজি অপারেটররা ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে প্রতি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ১৬০ টাকায় বিক্রি করবেন এবং ভোক্তা পর্যায়ে তা বিক্রি হবে ১২৩৫ টাকা করে। বাজার তদারকিতে মাঠে থাকবে কমিশন। অতিরিক্ত দামে এলপিজি বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের পর এলপিজি গ্যাস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম খান অভিযোগ করেন, অপারেটরদের কাছ থেকে এলপিজি সিলিন্ডার ১ হাজার ২৩৫ টাকা করে কিনতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া অপারেটরদের কাছ এত অল্প পরিমাণে কমিশন পাওয়া যায় যা দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল।
এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, ‘অপারেটররা নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দাম বেশি নিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। কমিশনের বিষয়ে জরিপ করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের প্রতি কেজি এলপিজির মূল্য সংযোজন করসহ (মূসক/ভ্যাটসহ) দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০২ দশমিক ৯১ টাকা, যা আগের মাসে ছিল ৯৮ দশমিক ১৭ টাকা। পাশাপাশি সাড়ে ৫ থেকে ৪৫ কেজি পর্যন্ত বোতলজাত সব এলপিজির দাম একই হারে সমন্বয় করা হয়েছে। গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির (অটো গ্যাস) ভ্যাটসহ নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ৫৭ দশমিক ৫২ টাকা, যা এতদিন ছিল ৫৪ দশমিক ৯০ টাকা।
একইভাবে বাসাবাড়িতে কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবহারকারীদের জন্য ভ্যাটসহ প্রতি কেজি রেটিকুলেটেড এলপিজির দাম ৯৯ দশমিক ৬৮ টাকা, যা আগে ছিল ৯৪ দশমিক ৯৪ টাকা এবং রেটিকুলেটেড এলপিজি গ্যাসীয় অবস্থায় প্রতি লিটারের দাম শূন্য দশমিক ২২১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল শূন্য দশমিক ২১১০ টাকা।
বিইআরসি জানায়, মে মাসের জন্য সৌদি আরামকোর প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত গড় সৌদি সিপি (কন্ট্রাক্ট প্রাইস) প্রতি টন ৫৫৫ মার্কিন ডলার বিবেচনায় এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে আবাসিকে প্রাকৃতিক গ্যাসলাইনের সংযোগ বন্ধ থাকায় রাজধানীর পাশাপাশি বিভিন্ন শহর ও গ্রামে বিপুল সংখ্যক মানুষ এলপিজির ওপর নির্ভরশীল।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে বিইআরসি। এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এই মূল্য বিবেচনায় নিয়ে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি। যদিও কমিশন নির্ধারিত দামে বাজারে এলপিজি পাওয়া যায় না। বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছেমত দাম আদায় করেন ক্রেতার কাছ থেকে।
কমিশন নির্ধারিত দামে বাজারে এলপিজি বিক্রি না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এলপি গ্যাস সমবায় সমিতি লিমিটেডের কোষাধ্যক্ষ আবু তাহের বলেন, এজন্য অপারেটররা দায়ী। কারণ তাদের কাছ থেকে বেশি দামে এলপিজি কিনতে হয়।
Leave a Reply