(আনিসুল হকের ফেসবুক থেকে নেয়া)
ও কিশোর আলোর সাথে যুক্ত ছিল। কিশোর আলোর কর্মী ছিল। অফিসে আমাদের ফ্লোরে আসত মাঝেমাঝেই। দু-একবার প্রদায়ক হিসেবে আমার সাথে ‘অন্য আলো’তেও কাজ করেছিল। অবশ্য সেসব করোনা মহামারির আগের কথা।
আমার একটা অভ্যাস এই যে কারো সাথে পরিচয়ের পর আমি তার গ্রামের বাড়ি, বাবা মা নানা দাদাসহ তার ঠিঁকুজি জানতে চেষ্টা করি। সেই সূত্রেই জেনেছিলাম, ওর নানা সাংবাদিক-লেখক সানাউল্লাহ নূরী।
ওর সাথে আলাপের এক পর্যায়ে খেয়াল করলাম, ও দারুণ প্রতিকৃতি আঁকতে পারে মানুষের, কিন্তু সেই প্রতিকৃতিতে কখনো সে মানুষটির চোখ আঁকে না। একদিন ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, চোখ আঁকো না কেন?
ও বলল, এটাই আমার স্টাইল।
একবার এই স্টাইলে আমার একটা প্রতিকৃতিও এঁকে দিয়েছিল ঐশ্বর্য।
ও কখনো আমাকে ওর অসুস্থতার কথা বলেনি, আমিও জানতে চাইনি কখনো। এত বড় অসুখ নিয়েও মেয়েটা দিব্যি হেসেখেলে বেড়াত, কলেজে যেত। দেখা হলে কী মিষ্টি করেই যে হাসত!
এই মাস চারেক আগে অফিসে ওর সাথে শেষ দেখা।
এরপর গতকাল দীপ্র হঠাৎ বলল, নয়ন ভাই, জানেন সারাহ মারা গেছে।
খবরটা শুনে মনটা একটু মিইয়ে গিয়েছিল।
তবে আজ বুঝলাম, ঐশ্বর্য মরেনি, দেহাবসানের আগে নিজের অঙ্গ প্রতঙ্গ মানুষের কল্যাণে দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং বিভিন্নজনের দেহে নিজের অঙ্গ প্রতঙ্গ প্রতিস্থাপন করে ও আসলে বেঁচে আছে, বেঁচে আছে চিরকালের ক্যানভাসে।
আচ্ছা, এত বাচ্চা একটা মেয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিল কীভাবে? আমি কি পারতাম এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে?
Leave a Reply