প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে চড়ে মাত্র ১০ মিনিটে ১০ সেকেন্ডে রাজধানীর দিয়াবাড়ি (উত্তরা) থেকে আগারগাঁওয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রী যাত্রা শুরু করলো রাজধানীবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল। মেট্রোরেলের প্রথম এই যাত্রার যাত্রী হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা, মন্ত্রিসভার সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিরা।
তার ট্রেন ছাড়ে ১টা ৫৩ মিনিটে। আর আগারগাঁও পৌঁছায় ২টা ১১ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রীর ট্রেনের চালক ছিলেন মরিয়ম আফিজা, যিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করে মেট্রোরেলের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
এই যাত্রায় শেখ হাসিনার সহযাত্রী ছিলেন দুই শতাধিক নাগরিক, যাদের মধ্যে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাক কর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। মেট্রোরেলে ওঠে সরকারপ্রধান ঘুরে ঘুরে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
এর আগে সবুজ পাতাকা নেড়ে মেট্রো ট্রেন চলাচলের সবুজ সংকেত তিনি দেন। তারপর সেই পতাকায় স্বাক্ষরও করেন সরকার প্রধান।
মেট্রোরেলে ওঠার আগে ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে টিকিট কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেলের উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দিয়াবাড়ি স্টেশনে গিয়ে টিকিট কাটেন তিনি। এর মাধ্যমে দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও রুটের প্রথম যাত্রী হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করার পর উত্তরা উত্তর স্টেশনে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে রাজধানীর উত্তরায় মেট্রোরেলের নামফলক উন্মোচন শেষে দিয়াবাড়িতে আয়োজিত সুধী সমাবেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল পরিচালনায় বিদেশি জনবলের ওপর নির্ভর করতে হবে না। দেশের জনবল দিয়েই পরিচালনা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক সংযোজিত হলো মেট্রোরেল। আজকে আমরা বাংলাদেশের অহংকারে আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম।
মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আরও চারটি মাইলফলক স্পর্শ করল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক। এই প্রথম বাংলাদেশ বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করল। মেট্রোরেল দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা পরিচালিত করা হবে। তার ফলে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি, এটি তারই একটি অংশ হিসেবেই কাজ করবে। তার ন্যূনতম মাত্রা সংযোজিত হলো। বাংলাদেশ দ্রুতগতির ট্রেনের যুদে পদার্পণ করল। এই মেট্রোরেলে সর্বোচ্চ গতি হবে (প্রতি ঘণ্টায়) ১১০ কিলোমিটার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ যখন আমরা শুরু করেছি, তখন এসেছিল আরকেটি আঘাত। হলি আর্টিজানের সেই সন্ত্রাসী আক্রমণ। আর অত্যন্ত দুঃখজনক, সেই আক্রমণে এই মেট্রোরেলের যারা পরামর্শক, জাপানিজ নাগরিক, সেই জাপানিজ পরামর্শক সাতজন হলি আর্টিজানে মৃত্যুবরণ করেন। আমি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি।
তিনি বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের মেট্রোরেলের কয়েকটি স্টেশনে তাদের নামফলক আমরা রাখব। তাদের নামফলক উত্তরার দিয়াবাড়ীর মেট্রোরেল প্রদর্শনী ও তথ্য কেন্দ্রে স্মৃতিস্মারক আমরা স্থাপন করেছি। তাদের নামটি যেন স্মরণ থাকে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায় দেশে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। এ সময় মেট্রোরেলে নারীদের জন্য আলাদা কোচ থাকবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
মেট্রোরেলের মান নিশ্চিত রাখা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে সবাইকে যত্নশীল হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মেট্রোরেল উদ্বোধন উপলক্ষে ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরআগে, রাজধানীর উত্তরায় মেট্রোরেলের নামফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর উত্তরায় সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
বুধবার সকাল ১১টা ৫ মিনিটে মেট্রোরেলের নামফলক উন্মোচন করেন তিনি। এর আগে ১১টার দিকে উত্তরায় মেট্রোরেলের উদ্বোধনে স্থলে এসে উপস্থিত হোন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমে স্বপ্নের মেট্রোরেলের যাত্রা শুরুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দেশের গণপরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের নতুন এই মাইলফলকের সূচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আতশবাজির কর্মসূচি থাকলেও পরে সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
মেট্রোরেলের দিয়াবাড়ি স্টেশন থেকে খানিকটা দূরে তৈরি করা সমাবেশ মঞ্চে ভাষণ দিয়ে দিয়াবাড়ি স্টেশনের পূর্ব দক্ষিণ পাশে দুটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর প্রধানমন্ত্রী স্টেশনের দোতলায় টিকিট কেটে তৃতীয় তলায় যান। তৃতীয় তলা থেকে মেট্রোরেলে উঠে আগারগাঁও যান। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরদিন থেকে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে চলবে মেট্রোরেল।
Leave a Reply