ধর্ম ডেস্ক: ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে ‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘শবে বরাত’ মূলত হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিতে পালন করা হয়। হাদিসের পরিভাষায় যাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা মধ্য শাবানের রজনী (রাত) বলা হয়।
মহিমান্বিত এই রাতে আল্লাহ বাব্বুল আলামিন অসংখ্য বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন। আবূ মূসা আল-আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সৃষ্টির সকলকে ক্ষমা করেন। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ১৩৯০; মেশকাত, হাদিস: ১৩০৬)
শবে বরাত বা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানের রাতে ক্ষমা চেয়ে বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করতে পারেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।’ (সুরা আহজাব: ৪১-৪২)
আবূ মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি তার রবের জিকির করে, আর যে ব্যক্তি জিকির করে না, তাদের দু’জনের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৯৬৫)
এ ক্ষেত্রে শবে বরাতের রাতে অনেককে দলে দলে মসজিদে গিয়ে নফল নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। এমনকি বিশেষ নিয়মে নির্দিষ্ট সংখ্যক নামাজ ও সুরা পাঠের কথাও বলে থাকেন অনেকে। কেউ কেউ আবার শবে রাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটিও খেয়ে থাকেন। এগুলো কি শরিয়তসম্মত?
ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, এই রাতকে কেন্দ্র করে রাত জেগে বিশেষ নিয়মে কোনো নামাজ নেই। এমনকি নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাত নামাজ আদায় কিংবা কোনো সুরা নিদিষ্ট কয়েকবার পড়তে হবে, হাদিসে এমন কোনো কথাও আসেনি।
তবে এই রাতে মহান আল্লাহ যে বান্দাদের ক্ষমা করেন, সে বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই যে কেউ চাইলে এই রাতে মহান রবের সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভের আশায় একাকী নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়া নবীজির দাঁত ভাঙার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শবে বরাতের রাতে হালুয়া খাওয়ার বিষয়েও শরিয়তে কোনো নির্দেশনা নেই।
মনে রাখতে হবে, পবিত্র রমজান মাসের আগের মাস হওয়ায় বান্দার জন্য শাবান মাসও বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। নবীজি এই মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) শাবান মাসের চেয়ে বেশি (নফল) সাওম (রোজা) কোনো মাসে পালন করতেন না। তিনি প্রায় পুরা শাবান মাসই সাওম পালন করতেন এবং বলতেন, তোমাদের সাধ্যে যতটুকু কুলোয় ততটুকু (নফল) আমল করো। কারণ, তোমরা (আমল করতে করতে) ক্লান্ত হয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তা’য়ালা (সওয়াব দান) বন্ধ করেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৪৬)
এছাড়াও ফজিলতপূর্ণ মাস হওয়ায় লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতের রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত, তওবা-ইস্তিগফার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শবে বরাতের সব আমলই নফল। আর নফল আমল নিজ নিজ ঘরে একাগ্রচিত্তে আদায় করাই উত্তম।
Leave a Reply