সোস্যাল মিডিয়া কর্ণার: হারিয়ে যাওয়া এক ফিনিক্স পাখি। কে সেই ব্যক্তি? দেশবরণ্য কথাসাহিত্য হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে শিলা আহমেদ। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। সে পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
এখন মনে হয় শীলা বুঝে গেছে – পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে। যেমন তার বাবা – হুমায়ুন আহমেদ
অভিনন্দন –
শীলা আহমেদ
হারিয়ে যাওয়া এক ফিনিক্স পাখি
—————————————————
তাঁর কাজের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি। নাটক আর সিনেমা মিলে মোট ১০টা কাজের নজির পাওয়া যায়।
সিনেমাটি হলো কালজয়ী ‘আগুনের পরশমনি’। মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মিত ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটির ‘অপলা’ চরিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পীর পুরস্কারও জয় করে ফেলেন তিনি।
একটা সিনেমা, একটা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এই অতিমানবীয় কাজটাই করে ফেলেছিলেন শীলা আহমেদ। নব্বই দশকের এই অভিনেত্রির আরেকটি পরিচয় হলো তিনি কিংবদন্তিতুল্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে।
হুমায়ূন আহমেদ ‘একজন মায়াবতী’ গল্পে একজন মায়াবতীকে খুঁজে ফিরেছেন। অথচ, সেই মায়াময় মুখটি ছিল তাঁর বাড়িতেই। যেমন চঞ্চল, তেমনই মোহনীয়। ঠিক যেন বাবার উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে আসা এক চরিত্র।
এই চরিত্রটি ছোট পর্দায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হন ‘আজ রবিবার’ নাটকে। সেটা ১৯৯৮ সালের কথা।
কি একটা সময় ছিল। তখনও টেলিভিশনের পর্দায় জনপ্রিয় নাটকের নতুন পর্ব দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন মধ্যবিত্তরা। পর্ব শেষে পরদিন সেসব নিয়ে আলোচনা চলতো কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, চায়ের দোকানে!
বাসি হয়ে যাওয়া সেসব দিনে এই শীলার নামটা ঘুরে ফিরেই আসতো। কারণ ‘কঙ্কা’ চরিত্রে তিনিই যে ছিলেন ‘আজ রবিবার’ নাটকের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
একটি যৌথ পরিবারের নানান গল্প নিয়ে সামাজিক কমেডি নাটকটির ১৪টি পর্ব আজও তার আবেদন হারায়নি।
নাটকে তাঁর আগমন আরো আগে আশির দশকের শেষ ভাগে। বাবার নাটক ‘বহুব্রীহি’তে শিশুশিল্পী হিসেবে তাঁর যাত্রা শুরু।
হুমায়ূন আহমেদের অন্য যে কোনো নাটক থেকে এটা আলাদা। ‘কারণ’টা হুমায়ূনই বলেন, ‘আমার নাটক এবং সিনেমার গল্পটা আগে লেখি। সেখান থেকে চিত্রনাট্য তৈরি করে নাটক বা সিনেমা বানাই। একমাত্র ব্যতিক্রম বহুব্রীহি। আগে নাটক বানিয়ে সেখান থেকে উপন্যাস লেখা।’
নাটকটি নির্মিত হয় ১৯৮৮ সালে। উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালে। কালজয়ী এই নাটকের প্রযোজকও ছিলেন আরেক কিংবদন্তি। তিনি হলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রবাদপুরুষ নওয়াজিশ আলি খান।
এরপর ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘প্রিয় পদরেখা’, ‘হিমু’, ‘ওইজা বোর্ড’, ‘নিমফুল’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ও ‘খোয়াব নগর’ এ ছিলেন শীলা।
নাটক সিনেমা বাদে শিলা ক্লোজ আপের বিজ্ঞাপনেও মডেল হয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও কলামিস্ট আসিফ নজরুলকে তিনি বিয়ে করেন ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। এই দম্পতির একটি কন্যা সন্তান আছে।
শীলা বাবার নাটকেই কাজ করেছেন, সেটাও আবার বেছে বেছে। ২০০৫ সালে শীলারই সহঅভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন হুমায়ূন আহমেদ। এরপর আর কখনোই নাটক বা সিনেমাতে দেখা যায়নি শীলাকে।
অকালেই তাই ঝরে যায় বাংলা নাটকের এক অমিত সম্ভাবনাময়ী অভিনেত্রী।
এই আক্ষেপটা হয়তো হুমায়ূন আহমেদের নিজেরও ছিল। তাই তো তিনি লিখে গেছেন, ‘মেয়ের ঘুম ভাঙলো’।
সে বলল, বাবা, তুমি একজন ভালো মানুষ। আমি বললাম, মা! পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, একজনও খারাপ বাবা নেই। এখন মনে হয় শীলা বুঝে গেছে – পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে। যেমন, তার বাবা।’
গত ৯ সেপ্টেম্বর শীলার জন্মদিন ছিল। ১৯৮২’র এই দিনে হুমায়ুন ও গুলতেকিনের ঘর আলোকিত করে জন্ম হয় তাঁর।
শুভ জন্মদিন শীলা আহমেদ
আমাদের হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব মিষ্টি এক ফিনিক্স পাখি ❤️
(সংগৃহীত)
Leave a Reply