ডেস্ক নিউজ: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনকারীরা। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট) সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকায় অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।
সকালে বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে শুরু হয়। পরে দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন দুলাল মাতবর নামের একজন গাড়ি চালক। সংঘর্ষের সময় তিনি একটি হাইএস মাইক্রোবাস চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন সংবাদমাধ্যমকে নিহতের পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে উত্তরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বেলা তিনটা পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় ৩০ জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে নিহত এক ছাত্রকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হাসান বলেন, ২০০ জনের বেশি আন্দোলনকারী আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাকি চারজনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।
অন্যদিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে এক ছাত্র নিহত হয়েছেন। ফারহান নামের ওই শিক্ষার্থী রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সিটি হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গণি। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী এলাকায় একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিন সকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজ থেকে বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত অবস্থান নেয়। এ সময় রামপুরায় পুলিশ বাক্সে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় একাধিক পুলিশ বক্স পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আগুন দেয়া হয়েছে বিটিভির ক্যানটিনেও। যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায়ও ফের আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
দিনভর সংঘর্ষে ঢাকার অফিস-আদালতেও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তায় নেই কোনো গণপরিবহনও। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হচ্ছেন না। সব মিলিয়ে উত্তাল ঢাকায় জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের অবস্থাও থমথমে। অন্য দিনের তুলনায় সচিবালয়ে উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের তেমন আনাগোনা সচিবালয়ে দেখা যায়নি। সচিবালয়ের ভেতরেও পরিবহনের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে।
সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক থাকলেও তা বাতিল করা হয়েছে। তবে কী কারণে এই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এছাড়া দুপুরে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় শিল্পমন্ত্রীর একটি প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কথা থাকলেও তা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রামপুরা ব্রিজের ওপর কথা হয় নাইম ইসলাম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবির সঙ্গে। তিনি বলেন, চাকরি বাঁচাতে অফিসে যেতে হচ্ছে। তবে রাস্তায় নেমে একদিকে ভোগান্তি অন্যদিকে আছি ভয়ের মধ্যে। রাস্তায় বাসের কোনো দেখা পাইনি। রিক্সা ভাড়াও অনেক বেশি চাচ্ছে। এছাড়া চারিদিকের যে খবর পাচ্ছি, তাতে কখন কোথায় কী হয় বলা মুশকিল। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। আমরা কোনো সংঘাত চাই না শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই।
সাতরাস্তা এলাকায় আমিন খান নামের এক পথচারী বলেন, অফিসের কাজে পল্টন যাবো। কিন্তু গাড়ি না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চারদিকে শুধু মারামারির সংবাদ পাচ্ছি। ভয়ের মধ্যে আছি। এছাড়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যখন পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছিল, ঠিক তখন আশেপাশের বাসার দরজা বন্ধ করে অনেককে ছাদের ওপর উঠে যেতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রামপুরা ব্রিজের ওপর কথা হয় নাইম ইসলাম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবির সঙ্গে। তিনি বলেন, চাকরি বাঁচাতে অফিসে যেতে হচ্ছে। তবে রাস্তায় নেমে একদিকে ভোগান্তি অন্যদিকে আছি ভয়ের মধ্যে। রাস্তায় বাসের কোনো দেখা পাইনি। রিক্সা ভাড়াও অনেক বেশি চাচ্ছে। এছাড়া চারিদিকের যে খবর পাচ্ছি, তাতে কখন কোথায় কী হয় বলা মুশকিল। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। আমরা কোনো সংঘাত চাই না শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই।
সাতরাস্তা এলাকায় আমিন খান নামের এক পথচারী বলেন, অফিসের কাজে পল্টন যাবো। কিন্তু গাড়ি না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চারদিকে শুধু মারামারির সংবাদ পাচ্ছি। ভয়ের মধ্যে আছি। এছাড়া আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যখন পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছিল, ঠিক তখন আশেপাশের বাসার দরজা বন্ধ করে অনেককে ছাদের ওপর উঠে যেতে দেখা গেছে।
Leave a Reply