সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলসংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে রায়ের মূল অংশ প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিকে আজ সকালে অন্য একটি মামলার বিচার চলাকালে দেওয়া বক্তব্যে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘তাদের (আন্দোলনকারী) জন্য আদালতের দরজা সব সময় খোলা আছে। তাদের কথাও গুরুত্বসহকারে শুনব।’
প্রকাশিত রায়ের বিষয়ে রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, রায়ে সব কোটা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সরকার কোটার হার কমাতে বা বাড়াতে পারবে। ইতোমধ্যে বিষয়বস্তুর (সাবজেক্ট ম্যাটার) ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে এ রায় এখনই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ‘রায়ের মূল অংশটুকু প্রকাশিত হয়েছে। কোটার বিষয়ে আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ওই দিন শুনানি ধার্য আছে। ফলে আপাতত হাইকোর্টের রায় কার্যকর হবে না।’
রায়ে বলা হয়, ২০১২ সালে করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ, লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে ২০১৩ সালে আপিল বিভাগে রায় বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির সরকারি প্রজ্ঞাপনের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি–নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে বিবাদীদের (রাষ্ট্রপক্ষ) নির্দেশ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ যদি অন্যান্য থাকে, সেসব ক্ষেত্রেও কোটা বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হলো। প্রয়োজনে ওই সব শ্রেণির ক্ষেত্রে কোটা পরিবর্তন ও হার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে এই রায় বিবাদীদের (সরকার) কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করার স্বাধীনতা বিবাদীদের (সরকার) থাকছে। এ বিষয়ে আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করার নির্দেশ দেওয়া হলো।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিষয়বস্তুর (সাবজেক্ট ম্যাটার) ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন এবং পক্ষভুক্ত হয়ে দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বুধবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ স্থিতিবস্থা জারি করেন। পরবর্তী শুনানি আগামী ৭ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে হাইকোর্টের রায়ের আপাতত কার্যকারিতা নেই। একইভাবে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল রয়েছে। ফলে আগামী চার সপ্তাহ পর্যন্ত কোটা (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) বলবৎ থাকছে না।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে সরকার। ওই কমিটি সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনো কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর ওই বছরের ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়। পর দিন ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করেন জনপ্রশাসন সচিব। পরিপত্র অনুযায়ী, নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ, উপজাতি ৫ ও প্রতিবন্ধীর ১ শতাংশ কোটা বাতিল করা হয়।
পরে ওই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ কোটা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট করেন। সে রিটের নিষ্পত্তি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায় স্থগিত চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিলের শুনানি চলাকালে কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। গত কয়েক দিনে এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আপিল বিভাগের শুনানিতে পক্ষভুক্ত হন।
এদিকে আজ সকালে আপিল বিভাগে একটি মামলার শুনানির সময় কোটাবিরোধী আন্দোলন বিষয়ে আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন- তাদের পরামর্শ দিন, তারা কেন নির্বাহী বিভাগের কথা বলেননি?
Leave a Reply