ডেস্ক নিউজ: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূল অতিক্রম করছে। রোববার (২৬ মে) মধ্যরাতের আগে এটি আছড়ে পড়ার কথা কথা রয়েছে বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি এলাকায়। রোববার সন্ধ্যা ৬টার পর ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রধান ড. শামীম হাসান ভূঁইয়া।
এদিকে, রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দুই চব্বিশ পরগনায় জোরালো হাওয়া বইতে পারে বলে সতর্ক করেছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। সেই সতর্ক বার্তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আংশিক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কলকাতা মেট্রোর পরিষেবা। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে আর টালিগঞ্জ থেকে নিউ গরিয়া পর্যন্ত মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে দক্ষিণেশ্বর থেকে টালিগঞ্জ বা মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত এখনও পর্যন্ত মেট্রো চলাচল সচল রয়েছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আপাতত এই রুটে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নেই তাদের। খবর দ্য হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের।
টালিগঞ্জ বা মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশনের পর থেকে নিউ গড়িয়া বা কবি সুভাষ পর্যন্ত মোট ৬টি স্টেশন রয়েছে। এগুলো হলো নেতাজি, মাস্টারদা সূর্য সেন, গীতাঞ্জলি, কবি নজরুল, শহিদ ক্ষুদিরাম। মূলত এই সব এলাকায় মেট্রো মাটির নিচে চলে না। বরং সড়ক থেকে অনেকটা উপরে ব্রিজের উপরে চলে। ফলে ঝোড়ো হাওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে একই সঙ্গে মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার রাতে মহানায়ক উত্তমকুমার থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। দুই স্টেশন থেকেই নির্ধারিত সময়ে শেষ মেট্রো ছাড়বে।
কলকাতায় উড্ডয়ন বন্ধ:
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আশংকাজনক হুমকির কারণে রোববার দুপুরের পরপরই ফ্লাইট অপারেশন স্থগিত করে কলকাতা বিমানবন্দর। এতে গোটা বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য বন্ধ হয়ে সুনশান নীরবতা দেখা গেছে।
উড়োজাহাজ চলাচলে কর্মব্যস্ত এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিতে নিরাপত্তা কর্মী, ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মী এবং কিছুসংখ্যক এয়ারলাইনসের কর্মী ছাড়া কেউই নেই। রোববার দুপুর থেকে ২১ ঘণ্টার জন্য ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে, শালিমার রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনগুলোকে শিকল এবং তালার সাহায্যে রেলপথের সঙ্গে বেঁধে দেয়া হয় যাতে প্রবল বাতাসের তোড়ে থামা ট্রেনগুলো দূরে সরে না যায়।
ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়েছে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় সোমবারও ওই শাখায় ১০টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের জেরে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে রাজ্যের উপকূলবর্তী দুই জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। দক্ষিণ-পূর্ব রেল জানিয়েছে, আগামী সোমবার দিঘা যাওয়া-আসার সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কায় সোমবার দক্ষিণ-পূর্ব রেলে হাওড়া-দিঘা তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ওই দিন বাতিল থাকছে মেচেদা-দিঘা ইএমইউ স্পেশাল, দিঘা-হাওড়া তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস এবং দিঘা-মেচেদা ইএমইউ স্পেশাল।
পূর্ব রেলের তরফে আগেই জানানো হয়, রিমালের কারণে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা এবং বারাসত-হাসনাবাদ বিভাগে রোববার রাত ১১টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ট্রেন পরিষেবা।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রোববার ত্রিপুরা সরকার খোয়াই, ধলাইসহ চারটি জেলায় লাল সতর্কতা জারি করেছে।
এদিকে, রোববার বিকেলে ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লাগতে পারে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের কয়েকটি জেলায় মহাবিপদ সংকেত দেখানোর কথা বলা হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং অদূরবর্তী দ্বীপ এলাকা। জেলাগুলো ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের সর্বাধিক ঝূঁকিতে রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবের কারণে আজ বিকেল তিনটা থেকে চৌদ্দটি জেলায় ভারী বৃষ্টিপাতসহ দমকা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাবে। উপকূলের দিকে এটি যতই আসতে থাকবে, ততই দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত ক্রমশ বাড়তে থাকবে।
এদিকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
Leave a Reply