ডেস্ক নিউজ: রোজার ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে ঘিরে পর্যটক বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের ৮০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে তাদের বাড়তি আনন্দ দিতে থাকছে নানা আয়োজন আর চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বুধবার (১০ এপ্রিল) কক্সবাজার শহরের সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার নানান ব্যস্ততা। ব্যস্ততা বেড়েছে সৈকত পাড়ের শামুক-ঝিনুক, আচার, শুটকি ও বার্মিজ পণ্যের দোকানে। এরই মধ্যে দোকানগুলোতে শুরু হয়েছে নতুন সাজ, থাকছে বাহারী পণ্য। এছাড়া হোটেল-মোটেলগুলোতেও আনা হয়েছে নতুনত্বের ছোঁয়া। লম্বা ছুটিতে এবার চাঙা হবে পর্যটন ব্যবসা এমনই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হোটেল-মোটেলগুলোতে ৮০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার বলেন, পর্যটন নগরীর প্রায় ৮০ শতাংশ রুম ইতিমধ্যেই বুকিং হয়ে গেছে। আমরা আশা করছি ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে প্রায় দেড় লাখ লোকের সমাগম হবে। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ।
হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পাবলিক রিলেশন অফিসার সায়িদ আলমগির বলেন, তারকা হোটেলে আগামী ১২ ও ১৩ এপ্রিল বুকিংয়ে সাড়া পাওয়া গেছে। পুরো ছুটির এই দুইদিনে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। ছুটির বাকি দিনগুলোতে অনলাইনে তেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি তার।তবে গরমের তীব্রতা উপেক্ষা করে ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ উদযাপনে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের।
এদিকে অন্যান্য ঈদের মতো এবারও কক্সবাজারে ব্যাপক পর্যটক আগমনের সম্ভাবনার কথা বলছে প্রশাসন। সঙ্গে পহেলা বৈশাখ যুক্ত হওয়ায় বাড়তি চাপ বাড়তে পারে বলে ধারণা তাদের। সেই বিবেচনায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন বলেন, কোনো পর্যটক যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য কয়েকটি টিম কাজ করবে পর্যটন জোনে।
কক্সবাজারে দিনদিন পর্যটক বাড়লেও বাড়েনি সুযোগ সুবিধা। এমনকি সমুদ্রে গোসলের সময় পর্যটকদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য কাজ করা লাইফ গার্ডের সংখ্যাও অপ্রতুল। যানবাহনে পর্যটক হয়রানি, হোটেল ভাড়া ও খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধ দমনে বাড়তি তৎপরতা জোরদারের দাবি ব্যবসায়ী ও সচেতন মহলের।
ঈদবাজারপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নৈসর্গিক এক স্থান কক্সবাজার। সাগরের সঙ্গে পাহাড়ের মিতালীর এমন দৃশ্য কক্সবাজার ছাড়া কোথাও দেখা নাও যেতে পারে। এখানে শুধুমাত্র দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত নয়, আছে আরও অনেক নয়নাভিরাম দর্শনীয় স্থান।
কক্সবাজারে এসে দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী ভ্রমণে না গেলে কক্সবাজার ভ্রমণ একেবারেই যেন পূর্ণতা পাবে না। তাই কম খরচে চলে যেতে পারেন মহেশখালীতে। কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএর ৬ নং ঘাট থেকে নদীপথে যেতে হবে দ্বীপটিতে। জনপ্রতি ১১০ টাকা ভাড়ায় পার হওয়া যাবে নদী। স্পিডবোটে নদী পারাপারই সবচেয়ে মুগ্ধ করবে আপনাকে। এছাড়া সেখানে গেলে মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, শুটিংব্রিজ, বৌদ্ধ মন্দির দেখার সুযোগ পাবেন। এছাড়া লবণের মাঠও দেখা যায় সেখানে। কিছুটা সুন্দরবনের ফিলও নেয়া যাবে মহেশখালী থেকে।
বর্তমানে কক্সবাজার ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হলো পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রোড কক্সবাজারের কলাতলী থেকে শুরু হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। মেরিন ড্রাইভ রোডের এক দিকে রয়েছে উত্তাল সমুদ্র সৈকত আর অন্য দিকে রয়েছে সবুজের ঢাকা ছোট-বড় পাহাড়। আবার কোথাও কোথাও পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণা ধারার দেখা মিলে। মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে যেতে যেতে বিস্তৃত সাগরের সমস্ত সৌন্দর্য আহরণ ও জেলেদের সাগরে মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। সেই সঙ্গে সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলবে টেকনাফ গর্জন ফরেস্ট খ্যাত চিরহরিৎ বন। কক্সবাজারের কলাতলী বা সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে খোলা জিপ, মাইক্রোবাস, সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে হিমছড়ি ও ইনানী সমুদ্র সৈকত যাওয়া যায়।
কক্সবাজার জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা হচ্ছে রামু। পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ রামুতে রয়েছে অনেক প্রাচীন বৌদ্ধ নিদর্শন। রামুতে সর্বমোট ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি রয়েছে। রামুর উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। আর মাত্র দুই কিলোমিটার অদূরেই কেন্দ্রীয় সীমাবিহার নতুন করে নির্মিত হয়েছে। কিছুটা দক্ষিণে এগিয়ে গেলেই রয়েছে নজরকাড়া লালচিং ও সাদাচিং বৌদ্ধ বিহার। এছাড়াও আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ছোট-বড় আরও অনেক বৌদ্ধ বিহার। এছাড়া রয়েছে রাংকোট বৌদ্ধ বিহার। রাংকোটে যেতেই দেখা মিলবে কক্সবাজার যার নামে নামকরণ সেই ব্রিটিশ কূটনীতিক ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের বাংলো।
এছাড়াও দেশের একমাত্র প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামুর ঈদগড়ের নীলাদ্রি লেক, হিমছড়ি, পাথুরে বিচ ইনানীসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট অপেক্ষা করছে পর্যটকের জন্য।
Leave a Reply