ডেস্ক নিউজ: শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইতিহাসের বরপুত্র তিনি। খোকা মিয়া, মিয়া ভাই, মুজিব ভাই, শুধুই মুজিবুর।
এভাবেই ইতিহাসের সিঁড়ি বেয়ে একদিন তিনি এজিটেটর থেকে নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তারপর বঙ্গবন্ধু, ইতিহাসের মহানায়ক, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের প্রতিষ্ঠাতা পিতা। ক্ষমতার মোহ নয়, জনতার আশা-আকাক্সক্ষাই তার পথ পরিক্রমণের লক্ষ্য ছিল। তাই এক দুর্গম অজপাড়াগাঁ থেকে উঠে এসে নিউইয়র্কের আলোকোজ্জ্বল জাতিসংঘ ভবনে দাঁড়িয়ে তার মায়ের ভাষা বাংলায় গর্বিত উচ্চারণে দুনিয়ার মানুষকে বাংলার সংগ্রামের ইতিহাস শোনাতে পেরেছিলেন। কিন্তু নির্মম নিষ্ঠুর ইতিহাস চক্রান্তকারীদের ষড়যন্ত্রের ছুরি দিয়ে তাকে পৃথিবীর বুক থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
ইতিহাসের এই দুঃসাহসী অভিযাত্রী যে হঠাৎ থমকে গেলেন, এই থমকে যাওয়ার পশ্চাৎ কাহিনী নিয়ে আদর্শের অনুসারীদের মাঝে একতরফা আলোচনা। বহুমাত্রিক অনুসন্ধান তাদের মাঝে অনুপস্থিত। তাই তো পথ চলতে বারবার হোঁচট খাওয়া। জীবনে চলার পথে বহু নেতার সংস্পর্শে এসেছেন শেখ মুজিব। কিন্তু শহীদ সোহরাওয়ার্দী সর্বদাই তার রাজনীতির গুরু, সাংগঠনিক নেতা। যতদিন সোহরাওয়ার্দী বেঁচে ছিলেন, তার নেতৃত্বের প্রতি তিনি অবিচল আস্থা পোষণ করে গেছেন। অনেক সময় মতের অমিল হয়েছে। কিন্তু নেতার নেতৃত্বের আস্থায় চিড় ধরেনি কখনও। এভাবেই ক্রমাগত তার সামনের পথে এগিয়ে চলা।
তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রাষ্ট্রপিতা এবং বাংলাদেশ ভূ-সীমার বাঙালিদের জন্য নিজস্ব আবাসভূমির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাঙালি জাতির জনক। বাংলাদেশ তথা বাঙালির ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় এটাই। তাকে বলা হয়ে থাকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাস্তবে তিনি আবহমান বাঙলার মহত্তম ও শ্রেষ্ঠতম বাঙালি। বাঙলা ভাষাভাষিগণ ইতিহাসের বাঁকে বহু অসাধারণ মানুষকে নিজেদের কাণ্ডারি হিসেবে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় জীবনে, সাংস্কৃতিক জীবনে, আর্থ-সামাজিক জীবনে এবং ভবিষ্যতেও বহু অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব নারী ও পুরুষ বাঙালি জীবনে অসাধারণ গুণাবলি নিয়ে আবির্ভূত হবেন, কিন্তু বাঙলা ভাষাভাষিদের জন্য একটি নিজস্ব আবাসভূমি গঠনে এবং বাঙালি জাতিসত্তার জন্য স্বাধীন বিকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেখার প্রশ্নে শেখ মুজিবের তুলনা তিনি নিজেই।
ইতিহাসের পাতায় উঠে আসেন এক অসাধারণ বাগ্মী হিসেবে। যা তাকে স্থাপন করে এডমন্ড বার্ক, কামাল আতাতুর্ক, আব্রাহাম লিংকন আর বিপিন চন্দ্র পালের কাতারে। তার এই অসাধারণ বাগ্মিতা সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল। হাজার বছরের বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা তার নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে তার আদর্শ ও চেতনাকে মুছতে চেষ্টা করলেও সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এখানেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতির শক্তিমত্তা।
পক্ষে-বিপক্ষে যারাই থাকুন না কেন, তাকে ঘিরেই বাংলার রাজনীতি ঘূর্ণায়মান থাকবে। মুজিব হচ্ছেন বাংলার আগামী। তাকে ও তার আদর্শকে ধারণ করে এগুতে পারলেই আমাদের রাজনীতি জনগণের পক্ষে থাকবে। গণতন্ত্র এবং শুধুই গণতন্ত্র বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের একক বাহন। সুতরাং একটি গণতান্ত্রিক শাসন ও সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে চাই। সবাই মিলে সে পথেই এগুতে হবে। বিকল্প চিন্তা হচ্ছে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হওয়া। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি শোষণহীন ক্ষুধামুক্ত ও অগ্রসর গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। আজকের বাঙালি ও বাংলাদেশের নাগরিকরা তার সে স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দিতে এক নবতর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বাঙালির এই সংগ্রাম তার স্মৃতির বেদীতে প্রতিদিনকার শ্রদ্ধাঞ্জলি।
Leave a Reply