বুড়িগঙ্গা টিভি ডেস্ক: সমুদ্রপথে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় মাদারীপুরের তিন যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন। পরিবারের কাছে ওই তিন যুবকদের মৃত্যুর খবর আসলে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
গত বুধবার লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে ডুবে তারা মারা যান বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।
নিহতরা হলেন- জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২০), সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২৫) ও পশ্চিম পাঁচখোলা গ্রামের আলি আক্কাবরের ছেলে মো. সম্রাট (২৪)।
স্থানীয়রা জানান, মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম পাঁচখোলা গ্রামের আলি আক্কাবরের ছেলে মো. সম্রাট (২৪) ইতালি পৌঁছাতে পাঁচ মাস আগে রাসেদ খান নামের এক দালালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। পরে রাসেদকে সম্রাটের পরিবার ৭ লাখ টাকা দেয়। এরপর ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সম্রাটকে লিবিয়ার একটি বন্দি শিবিরে আটকে রাখে। সেখানে চালানো হয় নির্যাতন। ঠিকমত খাবারও দেওয়া হতো না। এরপর খবর আসে সম্রাট মারা গেছেন।
সম্রাটের ভাই আজগর বলেন, ‘কতগুলো টাকা খরচ করে ভাইকে বিদেশ পাঠিয়েছি। এখন আমার ভাই নাই। সে মারা গেছে। এখন টাকাও গেলো, ভাইও গেলো। দালাল বলছে মরদেহ এনে দেবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাসেদ খান ও তার ভাই টুলু মাদারীপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষকে প্রলোভন দিয়ে ইতালি নেওয়ার কথা বলে টাকা নেন। তাদের বিরুদ্ধে মাদারীপুর ও শরীয়তপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
নিহতের স্বজনরা জানান, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২০) ও সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগীসহ (২৫) বেশ কয়েকজন যুবক ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন।
গত বুধবার লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রওয়ানা দেন তারা। ৩২ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নৌকায় ৫২ জন অভিবাসন প্রত্যাসীকে নিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকা ঢুবে যায়। এতে মামুন ও সজলসহ মারা যান ১২ জন। পরে খবর পেয়ে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড। এছাড়া এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন পার্শ্ববর্তী গোহালা ইউনিয়নের পান্নু শেখের ছেলে আপন শেখ।
নিহত মামুনের বড় ভাই সজিব শেখ ও নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী জানান, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী। তিনি ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেন। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালি পাঠালে ঘটে এই দুর্ঘটনা।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার আসাদ বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম সালাহউদ্দিন বলেন, মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। মামলা হলে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু পরে আবার বাদীদের সঙ্গে মিমাংসা করে ছাড়া পেয়ে যায়।
Leave a Reply