কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১০ বছরের শিশু মাদ্রাসা ছাত্র তাওহীদ ইসলামকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপ্টিক ট্যাংকে লাশ গুমে করে। এরপর ঘাতক শিশুটির পরিবারের কাছে মুক্তিপনের জন্য দাবী করে ৩ লাখ টাকা। এরপর কৌশলে মুক্তিপণের টাকা আদায় করে রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় একটি হোটেলে অবস্থান করে ঘাতক। সেখান থেকে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয় ঘাতক মকবুল। টাকা পেলে শিশু টিকে ছেড়ে দেবে এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে ঘাতকের দাবী মিটিয়ে দিলেও জীবন্ত শিশুকে ফেরত পায়নি পরিবার।
ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন : তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে সন্তানের লা শ পেল মা
নিহত তাওহীদের বাবা বিদেশে থাকে তাই অপহরণ করে দ্রুত টাকা হাতিয়ে নেয়া যাবে বলে মকবুল এমন কাজ করে বলে জানায় র্যাব।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার উজ্জ্বল মিয়া ও তাছলিমা দম্পতির ছেলে তাওহীদ। সে রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করত। গত ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে না ফিরে নিখোঁজ হয় পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন খোঁজাখুজির পর রাত আনুমানিক রাড়ে ৯টার দিকে অজ্ঞাত একজন ব্যক্তি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফোন করে জানায় সে তাওহীদকে অপহরণ করেছে এবং মুক্তিপন হিসেবে ৩,০০,০০০— (তিন লক্ষ) টাকা দাবী করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে। ১১ ফেব্রুয়ারি তাওহীদের মা র্যাবের নিকটও অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর র্যাব—১০ অভিযানে শুরু করে।
রবিবার রাতে র্যাব—১০ এর একটি দল তথ্য—প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানী শ্যামপুরের পোস্তগোলা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর মাদরাসা ছাত্র মোঃ তাওহীদ ইসলামকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপ্টিক ট্যাংকে লাশ গুমের পরও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের পর হত্যাকারী মোঃ মকবুল হোসেন (৩৭) কে গ্রেপ্তার করে। এসময় উদ্ধার করা হয় মুক্তিপনের ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
সোমবার দুপুরে র্যাব ১০ এর আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন প্রেস ব্রিফিং এ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ঘাতক মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তাওহীদের পরিবার ও অপহরণকারী মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতো। কয়েকদিন আগে মকবুল ভিকটিমের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেছে। তাওহীদের পরিবারের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। তাওহীদ সকালে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হতো এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেতো। গ্রেপ্তারকৃত মকবুল এর ধারণা ছিল যে, ভিকটিমের বাবা প্রবাসী তাই ভিকটিমকে অপহরণ করলে মোটা অংকের মুক্তিপন আদায় করা যাবে অল্পসময়ে অধিক অর্থ লাভের আশায় প্রায় ৬ মাস যাবৎ ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে আসছিল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাজমিস্ত্রি মকবুল ভিকটিম তাওহীদ রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা মাদ্রাসা থেকে বাড়ী ফেরার পথিমধ্যে রাস্তার পাশে ওৎ পেতে থাকে। মাদ্রাসা থেকে আনুমানিক রাত রাড়ে আটটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র শিশু তাওহীদকে মুখ চেপে ধরে ঐ এলাকার একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তার হাত, পা ও মুখ বেধে রাখে পরবর্তী মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয়টি জানায় এবং ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এসময় মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে ভিকটিমকে হত্যা করবে বলে হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের মুখের বাঁধন খুলে গেলে ভিকটিম ডাক—চিৎকার করলে ঘাতক মকবুল ক্ষিপ্ত হয়ে শিশু তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ঐ এলাকার নিকটস্থ একটি সেইফটি ট্যাংকের ভিতরে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঘাতক মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে প্রথমে আব্দুল্লাহপুর বাজারে, সেখান থেকে রাজেন্দ্রপুর, তারপর রসুলপুর আসতে বলে এভাবে ভিকটিমের মামাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে সর্বশেষ একই দিন আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মকবুলের কথা মত ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা—মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের উপরে ৪নং পিলারের গোড়ায় ৩ লাখ টাকা রেখে আসে। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে। সেখান থেকে র্যাব—১০ এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে।
Leave a Reply