ডেস্ক নিউজ: ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের হারে চরম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। কোথাও বাজি ফাটিয়ে কোথাও মিষ্টি বিলি করে উদযাপন করা হয়েছে ভারতের হার।
সামাজিক যোগাযোগের দৌরাত্মে মিত্র দেশে এমন উচ্ছ্বাস ভালোভাবে নেয়নি ভারতবাসী। বাংলাদেশের এমন আচরণের রীতিমত ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ভারতীয়দের মধ্যে। ভাষার মিল থাকায় ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বড় পর্দায় বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার আয়োজন এবং সেখান ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভারতের হার উদযাপন সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে নজর এড়ায়নি পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। সোমবার জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেতাকর্মীদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ফাইনাল আয়োজন নিয়ে কটাক্ষ সংক্রান্ত কিছু ফেসবুক পোস্ট প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, `অত্যন্ত আপত্তিকর এবং ঘৃণিত কাজ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুকে যেসব পোস্ট করেছে আমাদের দেশের বিরোধিতা করে এইসব কথাবার্তা এটা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের) প্রশ্রয়ে। উনি আমাদের গেরুয়া রং কে প্রথম আক্রমণ করেছে। গতকাল কলকাতার একজন মেয়র `ছাপ্পা মারা` মেয়র বলছেন ওই স্টেডিয়ামে (নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম) না হলেই জিততো। এটা কোনও দেশে হয় না।` এর পরেই বাংলাদেশকে আক্রমণ করে তিনি বলেন `যে বাংলাদেশ আমরা সৃষ্টি করেছি তারা আনন্দে পটকা ফাটিয়েছে, এটা অস্ট্রেলিয়া জেতার জন্য নয়। ভারত হারার জন্য। ওটা ইসলামিক কান্ট্রি। আর এখানে খাবো এখানে ঘুমাবো এদেরকে আগে বিচ্ছিন্ন করা দরকার। এই মালগুলোকে আগে চিহ্নিত করে সোশ্যাল মিডিয়াতে চিহ্নিত করে একেবারে গোড়া থেকে তুলে ফেলে দেয়া দরকার। আমার সীমাবদ্ধ ক্ষমতায় আমি প্রতিরোধ করবো, এদের এক্সোপোজ করবো।`
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার বাইরে দীর্ঘদিন ট্যাক্সি চালিয়ে আসছেন বিহারের বাসিন্দা ভিম সিং। ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় তিনি বলেন `আমরা এবার ভেবেছিলাম ভারত কাপ নিয়ে আসবে, কিন্তু সেই উৎসবটা আমাদের মধ্যে আর থাকলো না। কিন্তু আমি এটা জানি না কাপটা এদেশে থেকে গেলে তাদের কী ক্ষতি হতো? ইন্ডিয়া হেরে গেলে ওরা বাজি ফাটাচ্ছে আনন্দ করছে এটার আমি নিন্দা জানাচ্ছি। আমি নিন্দা জানাচ্ছি বাংলাদেশের এমন আচরণে। যেখানে অস্ট্রেলিয়া কাপ জেতার থেকেও ভারত হারায় তারা বেশি আনন্দ পাচ্ছে। চিরকাল বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আমরা মনে করতাম। ভারত জিতলে সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকরা খুশি হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ভারত হারলে তারা বেশি আনন্দ পায়। আমরা নিন্দা করি এমন আচরণের।`
আরেক ট্যাক্সি চালক জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, `ইন্ডিয়ার জন্য হেরে যাওয়া দুঃখের বিষয়, কিন্তু যেভাবে বাংলাদেশিরা আনন্দ করছে এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। আমরা সব সময় বাংলাদেশকে হেল্প করি, সহযোগিতা করি, ওরাও আসে এদেশে। যাওয়া আসা লেনদেন সবই চলে তারপরও ওদের এমন আচরণ দুঃখের বিষয়। ইন্ডিয়া হেরে যাওয়ায় ওরা যে কাজ করছে আমরা তার জন্য ভৎর্সনা জানাই।
কলকাতার ব্যাংকশাল আদালত চত্বরে কলকাতার যুবক জিৎ অধিকারী বলেন `বিশ্বকাপের যেদিন ফাইনাল ম্যাচ হয় সেদিন থেকে দেখছি শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতে যে বাংলাদেশিরা বসবাস করে তারা পর্যন্ত বাজি ফাটাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশকে ভারত নানাভাবে সেই একাত্তরের যুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত সহযোগিতা করে আসছে। আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনা পয়সার চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশি রোগীরা ভর্তি হন। বাংলাদেশ আমাদের থেকে সাহায্য নিয়ে বড় হচ্ছে আবার আমাদের বিরুদ্ধেই তারা বলছে। খুবই লজ্জাজনক ঘটনা এটা।`
Leave a Reply