খেলাধুলা ডেস্ক নিউজ: ভারতের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি বাংলাদেশ। যেখানে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসের ব্যাটে শুরুটা দুর্দান্ত করলেও মাঝে খেই হারিয়ে ফেলে। তবে শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ব্যাটে দলীয় আড়াইশ পার করে টাইগাররা।
আজ পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুদল। বাংলাদেশ সময় আড়াইটায় ম্যাচটি শুরু হয়। যেখানে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান করে।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা খুব সাবধানী করে। ফলে দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ১০ রান তুলতে পারেন। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ৫ ওভারে বিস্ফোরক ব্যাটিং করেন এই দুই ওপেনার। ভারতীয় বোলারদের তুলোধুনো করে তুলে ৩০ বলে তুলে নেন ৫৪ রান। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন জুনিয়র তামিম।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওপেনিং রানের জুটি এখন তানজিদ-লিটনের (৮৮ বলে ৯৩)। আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে মেহরাব হোসেন ও শাহরিয়ার হোসেনের ৬৯ রান।
ফিফটির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তানজিদ। কুলদীপ যাদবের বলে এলবি হওয়া এই ব্যাটার ৪৩ বলে ৫১ রান করেন। তবে এরপর এ ম্যাচে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে টাইগারদের নেতৃত্ব দেওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত দ্রুত ফিরে যান। ১৭ বলে ৮ রান করে তিনি রবীন্দ্র জাদেজার বলে আউট হন।
টপঅর্ডারে খেলতে আসা মেহেদী হাসান মিরাজ নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। মোহাম্মদ সিরাজের বলে খোঁচা দিলে উইকেটের পেছনে দারুণ এক ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল। মিরাজ ১৩ বলে ৩ রানে ফেরেন। ভালো খেলতে থাকা লিটন দাস ফিফটির পরও দেখেশুনে ব্যাট চালান। তবে জাদেজার বলে মাথা গরম করে ফেলেন এই ব্যাটার। তুলে মারতে গিয়ে শুভমান গিলের ক্যাচে মাঠ ছাড়েন। ৮২ বলে ৭টি চারে ৬৬ রান আসে লিটনের ব্যাট থেকে।
অফফর্মে থাকা তাওহীদ হৃদয়ও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। শার্দুল ঠাকুরের বলে আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে ১৬ রান করেন। এরপর মুশফিকুর রহিম ভালো শুরু পেলেও জসপ্রিত বুমরাহর কাছে পরাস্থ হন। ৪৬ বলে একটি চার ও সমান ছক্কায় ৩৮ করেন তিনি। ১৪ রান করা নাসুম আহমেদকে ফেরান সিরাজ। ঝড়ো ব্যাট করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শেষ ওভারে বুমরাহ বলে আউট হলেও নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করেন। তিনি ৩৬ বলে ৩টি চার ও সমান ছক্কায় ৪৬ রান করেন।
ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ২টি করে উইকেট পান বুমরাহ, সিরাজ ও জাদেজা।
ম্যাচে আগে এদিন টস করতে আসেননি বাংলাদেশের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। চোটের কারণে এই ম্যাচে খেলছেন না তিনি। আজ বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাকিবের বদলে খেলছেন নাসুম আহমেদ। পরিবর্তন আরও একটি হয়েছে। পেসার তাসকিন আহমেদের বদলে দলে এসেছেন হাসান মাহমুদ।
ঘরের মাঠে চলমান বিশ্বকাপে যেন উড়ছে ভারত। প্রথম তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষকে কোনোরকম পাত্তা না দিয়েই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে রোহিত শর্মার দল। অন্যদিকে, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারানোর পর ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। এই ম্যাচ দিয়ে তাই জয়ের ধারায় ফিরতে চায় দলটি।
কাগজে-কলমে এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে ফেভারিট ভারতই। কিন্তু রোহিত-কোহলিদের বিপক্ষে ম্যাচ বলেই কি না কিছুটা আশাবাদী বাংলাদেশ। দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ চার ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে আছে বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে শ্রীলংকার মাটিতে এশিয়া কাপের একটি ম্যাচও।
২০১৯ বিশ্বকাপের পর মাত্র চারবার মুখোমুখি হয়েছে দুদল। ওয়ানডে বিশ্বকাপ মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে দারুণ এক অর্জন আছে বাংলাদেশের। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে ৫ উইকেটে বিধ্বস্ত করে দুর্দান্ত এক জয়ের নজির গড়ে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সেবার গ্রুপপর্ব থেকে ভারতকে ছিটকে দিয়েছিল টিম টাইগার্স। কিন্তু এরপর বিশ্বকাপের মঞ্চে ভারতকে আর হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯ তিন আসরের দেখায় সবগুলোতেই হেরেছে টাইগাররা। এখন পর্যন্ত ৪০ ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এরমধ্যে বাংলাদেশের জয় ৮টিতে এবং হার ৩১টিতে। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
Leave a Reply