বিনোদন ডেস্ক: দেশে কিংবা বিদেশে রকস্টার, নগর বাউল, গুরু- নানা বিশেষণে ভক্তরা তাকে ডাকেন। তিনি আর কেউ নন, ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। আমাদের গুরু জেমস। নামটি শুনলেই একটি ছবি ভেসে ওঠে সবার মননে, ভেসে ওঠে এক রকস্টারের অবয়ব। যার গানে বহুরাত নির্ঘুম কেটে যায় হাজারো তরুণের, যিনি না থাকলে জমে না কোনো উৎসবের আসর আজ সেই জেমসের জন্মদিন। সংগীতের এই কালপুরুষ ৫৯ বছর বয়সে পা রাখলেন। বরাবরের মতো এবারের জন্মদিনেও নিজ থেকে তিনি কোনো আয়োজন করছেন না। তবে প্রতিবছরের মতো ভক্তদের নানা আয়োজন থাকছেই।
জেমসের জীবন বেশ বাঁকবদলের, অনেক গল্পের। উত্তরবঙ্গের এই ছেলে নওগাঁর পত্নীতলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী, সেই সূত্রে ছোটবেলা থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় বাবার সঙ্গেই ঘুরে বেড়াতে হতো। বাবা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারমান হলেন, আর তাকেও থাকতে হলো চট্টগ্রামে। সেখান থেকে মাথায় উঁকি দিল নতুন পাগলামি। সংগীত নিয়ে পাগলামি। নাইনে পড়া অবস্থায় তার বাবা যখন বুঝলেন ছেলের আর পড়াশোনা সম্ভব নয়, তখন ঘর থেকে তাকে বের করে দেওয়া হলো। ঠাঁই হলো চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে। আর সেখানেই হয়ে ওঠে তার গানের জগৎ। আজিজ বোর্ডিং জেমসের জীবনে বিশাল স্মৃতিময় রেখা আলোকপাত করে গেছে। ফলে জেমস এখনো স্মৃতিকাতর হন তার অতীতের সে সময়কে নিয়ে।
’৮৬ সালে ঢাকায় এসে প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ করেন। এর পরই আসিফ ইকবালের লেখা ‘অনন্যা’ জেমসের প্রথম একক অ্যালবাম। যেটা বের হয় ১৯৮৭ সালে। যার প্রতিটি গানই অসাধারণ। বিশেষ করে ‘অনন্যা’ কিংবা ‘ওই দূর পাহাড়ে’ গানগুলো বুকের মাঝে সত্যিই কাঁপন জাগায়। তবে এই গান শুনে কারও পক্ষে ধারণা করা সম্ভব হবে না যে গানটি জেমস গাইছেন। তার পর ‘জেল থেকে বলছি’। অডিও বাজারে বড় ধরনের একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ‘জেল থেকে বলছি’ নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের কাছে ভেরিয়েশন ইমেজ তৈরি করে ফেলে। এই সময়টাকে অডিও বাজারের চরম সফল যুগ বলা হয়। ১৯৯৫ সালে জেমসের দ্বিতীয় একক বের হয়। ‘পালাবে কোথায়’ অ্যালবামের ‘প্রিয় আকাশি’ গানটি জেমসকে আরও রহস্যময় করে তোলে। সেই বছরে প্রিন্স মাহমুদের প্রথম ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম ‘শক্তি’তে দুটি গান করেন। ’৯৬ সালে ‘মান্নান মিয়ার তিতাস মলম’ অথবা কবি শামসুর রাহমানের ‘সুন্দরীতমা আমার’ তখন পাড়ামহল্লায় বড়-ছোট সবার মুখে। জেমস যে শুধু জেমস এই দুর্লভ সত্য প্রতিষ্ঠিত করেন ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’। এই অ্যালবাম এতটাই শ্রোতাপ্রিয়তা পায় যে, ব্যান্ড বলতে যাদের নাক সিটকে যেতÑ সেই মুরব্বিরাও মনোযোগ দিয়ে শুনলেন ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’।
২০০৪ সালে কলকাতার সংগীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে গান নিয়ে কাজ করেন জেমস। ২০০৫ সালে বলিউডে গ্যাংস্টার চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। ২০০৬ সালে আবারও বলিউডের ছবিতে কণ্ঠ দেন। ২০০৭ সালে তিনি ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান দুটি হলো ‘রিশতে’ এবং ‘আলবিদা’। আর তাতেই বাজিমাত। সেই আশির দশকের ‘স্টেশন রোড’ থেকে আজও তিনি সমানভাবে আমাদের মুগ্ধ করে রেখেছেন। আজও অনেকেই সেই ৯০ দশকের মতো প্রতীক্ষা করেন তার নতুন অ্যালবামের।
Leave a Reply