মুন্সিগঞ্জ : চলতি বছরের ১৯ জুন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজের তিন মাস পরে থানায় এসে হাজির হলেন রিকশাচালক শরীফুল ইসলাম। সে সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। এ ঘটনায় কয়েক দিন উদ্ধার কাজ চললেও সেসময় খোঁজ মেলেনি তার। অবশেষে তিন মাস ১০ দিনের মাথায় খোঁজ মিলেছে সেই চালকের, বেঁচে আছেন তিনি।
রবিবার (১ অক্টোবর) দুপুরে পদ্মা উত্তর থানায় উপস্থিত হন তিনি। মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) সুমন দেব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শরীফুল বাগেরহাটের মোল্লাহাট গ্রামের জিন্নাত আলীর ছেলে।
শরীফুল জানান, তার বাড়ি বাগেরহাটে। তবে তিনি ঢাকার হাজারীবাগে থেকে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঘটনার দিন রাতে পারিবারিক কলহের জেরে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। তার উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা থেকে বাগেরহাটের গ্রামে চলে যাবে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত হয়ে তিনি রিকশা চালিয়ে পদ্মা সেতুর ওপরে ওঠেন। একপর্যায়ে একটি গাড়ির সঙ্গে হালকা ধাক্কা লাগলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধাওয়া করে। এ সময় গুলি করে দেবে এই ভয়ে সে রিকশা রেখেই সেতু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নদীতে।
তিনি আরও বলেন, ‘রাতভর নদীতে ভেসেছিলাম। নদীতে অনেক ঢেউ ছিল। আমি কোনও কূলকিনারা খুঁজে পাইনি। নিজের মতো করে সাঁতার কাটছিলাম। সকালে দূরের একটি এলাকায় উঠি। পরবর্তীতে বাসে ওঠে বাড়িতে গেলেও পরিবারের কেউ আমার এই ঘটনা বিশ্বাস করেনি। সবাই বলছিল, অটোরিকশাটি আমি চুরি করে বিক্রি করে দিয়েছি। কিস্তির টাকা দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাটি কিনেছিলাম। পরে জানতে পারি এটি থানায় আছে। এজন্য পদ্মা সেতুর উত্তর থানায় আসি।’
এ বিষয়ে শরীফুল ইসলামের শ্বশুর মোহাম্মদ দাউদ মোল্লাহ বলেন, ‘ঘটনাটি আমাদের কাছে বলার পর আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ, পদ্মা নদীতে পড়ে কেউ জীবিত ফিরতে পারে না। শরীফুলের মানসিকভাবে কিছু সমস্যা ছিল। এখন থানায় এসে দেখলাম এটি তারই রিকশা। এখন বিশ্বাস হচ্ছে।’
এদিকে সুমন দেব বলেন, ‘উল্টোপথে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে সেতুর ওপর থেকে লাফ দেওয়া শরীফুলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই করে শনাক্ত করা হয়েছে সে-ই সেতু থেকে লাফ দেওয়া শরীফুল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় মাদারীপুরের শিবচর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তাই তাকে শিবচর থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনি নিজেই পদ্মা সেতুর উত্তর থানার এসে হাজির হয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৮ জুন দিবাগত রাত ২টার দিকে মাওয়া প্রান্ত হয়ে উল্টোপথে সেতুতে উঠে পড়েন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক শরীফুল। বিষয়টি টের পেয়ে সেতুর নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ধাওয়া করেন। পরে সেতুর ২১ নম্বর পিলারের কাছে পৌঁছে রিকশা রেখে নদীতে ঝাঁপ দেন। দুই দিন নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কাজ করলেও তখন তাকে পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply