নিজস্ব প্রতিনিধি: উত্তরা থেকে ফার্মগেট আসতে বা ফার্মগেট থেকে উত্তরা যেতে প্রথমেই মাথায় আসত ভয়াবহ জ্যামের কথা। গুগল ম্যাপের তথ্যানুযায়ী প্রায় ১৬ কিলোমিটারের এই পথটি পাড়ি দিতে কখনও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগত। কিন্তু সেই সময়কে কমিয়ে এনেছে উড়ালসড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে)।
উত্তরা থেকে ফার্মগেট আসতে যেখানে সময় লাগত ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সেখানে উড়ালসড়কের কারণে সময় লাগছে মাত্র ৮ মিনিট।
গতকাল শনিবার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আজ রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে উড়ালসড়কটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সকাল থেকেই এতে যান চলাচল শুরু হয়।
উড়ালসড়কটি খুলে দেওয়ার পরই এটি পাড়ি দেওয়া এক ব্যক্তি বলেন, নিজের গাড়ি নিয়ে ব্যক্তিগত কাজের জন্য উত্তরা গিয়েছিলাম। উত্তরা থেকে উড়ালসড়ক হয়ে ফর্মগেট আসতে মাত্র ৮ মিনিট সময় লেগেছে। যেখানে মাত্র একদিন আগেও এ পথ অতিক্রম করতে প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা লেগে যেত। এখন সেখানে লেগেছে মাত্র ৮ থেকে ১০ মিনিট। এটি নগরবাসীর জন্য অনেক সুফল বয়ে আনবে।
রাজধানীতে যানজনের দুর্ভোগ কমাতে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল উড়ালসড়ক তথা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার এক যুগেরও বেশি সময় পর এটির একটি অংশ চালু করা হয়েছে।
১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম পর্যায়ে ১১ কিলোমিটার চালু হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটের অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকী অংশ চালু করতে আরও এক বছর লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের শুরু থেকেই বলা হয়েছিল, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজ হওয়ার পাশাপাশি ঢাকার যানজট নিরসনে এক্সপ্রেসওয়েটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
তবে এত কম দূরত্বের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বিশাল অংকের খরচ নিয়ে আছে সমালোচনা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে শুরু করে মগবাজার হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।
এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা-নামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। এই র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭ কিলোমিটার।
এদিকে উড়ালসড়ক চালু হওয়ার আগেই বেশ কিছু নিদের্শনা জারি করে সেতু বিভাগ। এতে বলা হয়, উড়ালসড়কে যান চলাচলা শুরু হলে কোনো যানবাহন থামানো যাবে না এবং যানবাহন থেকে নেমে ছবি বা সেলফি তোলাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সেতু বিভাগ থেকে জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উড়ালসড়কে দুই ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। পথচারী চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ। এর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ।
এছাড়া মূল উড়ালসড়কে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আর ওঠানামার স্থানে (র্যাম্প) সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার। এছাড়া নির্ধারিত টোল পরিশোধ করে যেসব স্থান দিয়ে উড়ালসড়কে ওঠানামা করা যাবে।
Leave a Reply