ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ক্লুলেস ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি অস্ত্র উদ্ধার করে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন ঢাকা জেলার ৭ বার সেরা পদক প্রাপ্ত তদন্তকারী এসআই আবুল কালাম আজাদ।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে র্যাব পরিচয়ে ৭১ লাখ টাকা ডাকাতি মামলায় ৮ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে লুন্ঠিত টাকার মধ্যে দশ লাখ নয় হাজার পাঁচশত টাকা, একটি বিদেশী রিভলবার, দুই রাউন্ড তাজা গুলি, ঘটনায় ব্যবহৃত হাইএস মাইক্রো, হ্যান্ডকাফ, পিস্তল সদৃশ খেলনা পিস্তল, ডাকাতদের ব্যবহৃত র্যাব লেখা কটি, একটি ওয়াকিটকি ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।
তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্র র্যাব পরিচয়ে ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোড এবং ঢাকা-মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াতকারী ব্যবসায়ীদেরকে বাস থামিয়ে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ডাকাতি করে আসছিলো। ডাকাতরা মূলত ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার তাতিবাজারে আসা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদেরকে টার্গেট করতো। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ ও নগদ টাকা ডাকাতি করার জন্য সংঘবদ্ধ এই ডাকাতচক্র তাতিবাজার কেন্দ্রিক এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ জানুয়ারি দুপুরে দোহারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকন স্বর্ণ বিক্রি করার জন্য ঢাকার তাতিবাজারে যায়। স্বর্ণ বিক্রি শেষে নাহিদ ৪০ লক্ষ টাকা ও খোকন ৩১ লক্ষ টাকা সাথে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে দোহারের উদ্দেশ্যে নবকলি বাসে উঠে। অতঃপর সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৬ টার সময় তাদের বহনকারী নবকলি বাসটি ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডের কেরাণীগঞ্জ মডেল থানাধীন কোনাখোলা নামক স্থানে পৌছালে একটি সাদা হাইএস মাইক্রো চলন্ত নবকলি বাসটিকে জোরপূর্বক থামায়। তারপর মাইক্রো হতে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ডাকাত (র্যাবের কটি পরিহিত) বাসে উঠে যাত্রীদেরকে র্যাবের লোক পরিচয় দিয়ে ২ জন আসামীকে ধরতে আসছে বলে জানায়।
তারপর ডাকাত সদস্যরা বাসে বসে থাকা স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকনকে টাকার ব্যাগসহ জোরপূর্বক বাস থেকে নামিয়ে ডাকাতদের মাইক্রোতে তোলে। এরপর ডাকাতদল স্বর্ণ ব্যবসায়ী নাহিদ ও খোকনের চোখ-মুখ বেঁধে মারধর করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ ৭১ লাখ টাকা ডাকাতি করে দুই স্বর্ণকারকে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের নিমতলা নামক স্থানে হাইওয়ের পাশে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে দূর্ধর্ষ এই ডাকাতির ঘটনায় কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাতদের আসামী করে একটি ডাকাতির মামলা রুজু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আমিনুল ইসলাম (দক্ষিণ) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এসআই আবুল কালাম আজাদের। নেতৃত্বে একটি চৌকস দল দূর্ধর্ষ এই ডাকাতি মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য ব্যাপক কার্ষক্রম শুরু করেন। তদন্তদল ঘটনাস্থলের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ এই। ডাকাতচক্রকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
তারপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) মো. শাহাবুদ্দিন কবীর, মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মামুন অর রশিদ এর সমন্বয়ে গঠিত ও এসআই আবুল কালাম আজাদের। নেতৃত্বে একটি চৌকস আভিযানিক দল কেরাণীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ এবং ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ০৮ সদস্যকে সুজন (৩৯), আলামিন রেহান, ড্রাইবার কবির (৪৬), মিল্টন (৪৩), জাবেদ সিরাজুল (৪০), নয়ন বাবু (২৮), কামাল (৪৫) ও আ. রহমান সাজ্জাদ (৪৫) কে গেফতার করতে সক্ষম হয়। অভিযানকালে ডাকাত আলামিন রেহান এর স্বীকারোক্তিতে ডাকাত সুজন মন্ডলের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশী রিভলবার, দুই রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত বিভিন্ন ডাকাতের স্বীকারোক্তিমতে তাদের বাসায় তল্লাশি অভিযান করে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত, হাইএস মাইক্রো ও লুন্ঠিত নগদ টাকা উদ্ধার হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত সদস্যরা গত ১৭ জানুয়ারি ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডে একইভাবে আরও একটি ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। মামলা তদেন্ত জানাগেছে, তারা ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ এলাকায় একাধিক ডাকাতি সংগঠিত করেছে।
Leave a Reply