কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): শীতের তীব্রতা ও কুয়াশা বাড়ার সাথে সাথে গত কয়েকদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাতচক্র ঢাকা—মাওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ঝিলমিল, প্রিয়প্রাঙ্গণ ও সাউথ টাউন আবাসিক এলাকা এবং মুন্সীগঞ্জের নিমতলী এলাকায় বিভিন্ন পথচারী ও ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে হাইওয়েতে যাতায়াতকারী মানুষদের ডাকাতি করে। ডাকাতরা সাধারন মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঝিলমিলের জঙ্গলে নিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। আবার কখনো গাছ ফেলে রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি আটকিয়ে গাড়িতে থাকা লোকজনের নগদ টাকা—পয়সা স্বর্ণালংকার লুটে নেয়।
এমন ডাকাত চক্রের ৯ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।
রবিবার দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো সাগর গাজী ওরফে শাওন (২৫), রুবেল (২৪) রাজিব (৩০), শ্রাবণ (২২), ফাহিম (২২), আরিয়ান (২৩), হিমেল (২৪), হারুন (৩৮) ও শাওন(২৩)। এদের মধ্যে চারজন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া, তিনজন কেরানীগঞ্জ, একজন ঢাকার জুরাইন ও অপর একজন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা।
পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের ২৬ডিসেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে ঝিলমিল এলাকায় সুজন সরদার (৩০)নামে এক ব্যক্তিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কৌশলে হাত পা বেধে ফেলে এবং তার সাথে থাকা নগদ টাকা ও দুইটি মোবাইল ফোন নিয়ে মারধর করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারপর ডাকাতদল সুজনকে নিয়ে ঝিলমিলের পাশে জাকির মিয়ার বাসায় যায়। তারপর রাত অনুমান সোয়া ২টার সময় ডাকাতদল সুজনকে দিয়ে তার প্রতিবেশী জাকিরকে ডাকায়। জাকির তার বাসার দরজা খুলে দেখে প্রতিবেশী সুজনের হাত—পা ও চোখ বাধা এবং ডাকাতরা সাথে সাথে ধাক্কা মেরে ফেলে রামদার উল্টা দিক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে জাকিরকে বেধে ফেলে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তারপর ডাকাতদল বাড়ির সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। ডাকাতদল বাড়ির সবার হাত, পা ও চোখ বেধে ঘরের ভিতরে রেখে বাহিরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাত অনুমান আড়াইটার দিকে চলে যায়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় জাকির মিয়া (৪৭) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ডাকাতদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে (মামলা নম্বর— ৭৩)। ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ এই ডাকাতচক্রকে তথ্য—প্রযুক্তির মাধ্যমে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার একটি চৌকস দল কেরাণীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দলের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানকালে ডাকাতদের হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত তিনটি রামদা,৫০ হাজার টাকা, স্বর্ণালংকার ও ৩টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, ডাকাতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত গত বছরের ৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের সাউথটাউন এলাকায় হাইওয়ে রোডে ব্যারিকেড দিয়ে মাওয়া থেকে ঢাকা গামী দুটি গাড়ি ডাকাতি করে। এছাড়াও ডাকতদল গত ২০ডিসেম্বর তারিখ ঝিলমিলের সামনে আন্ডরপাসে ২ জন চায়না নাগরিকসহ ৪ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি করেছে। ডাকাতরা আরো জানায় যে, তারা শীতের তীব্রতা ও কুয়াশা বাড়ার সাথে সাথে গত বেশ কিছু দিন যাবৎ বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছিলো। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঢাকা—মাওয়া হাইওয়ের কেরাণীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের নিমতলী এবং ঢাকা—কুমিল্লা হাইওয়ের গজারিয়া, মেঘনা ও দাউদকান্দি এলাকায় ডাকাতি করার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলার রয়েছে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অপস্ (দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেরাণীগঞ্জ সার্কেল মোঃ শাহাবুদ্দিন কবীর, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, মামলার তদন্ত কর্মকতার্ এসআই নাজমুস সাকিব সহ অনেকে।
Leave a Reply