বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন আত্মহত্যা করেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানিয়েছে। প্রতিবেদনে তা বলা হয়েছে:
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফারদিন হত্যার বিষয়ে ডিবির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ সমাবেশ আপাতত স্থগিত করে ডিবি কার্যালয়ে যান বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
বুধবার ফারদিনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শেষে ডিবি জানায়, বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন। এর প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ সকাল ১০টায় বুয়েট শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকেন বুয়েটের একদল শিক্ষার্থী।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, ফারদিনের ডিজিটাল ডিভাইস পর্যালোচনা করে ও প্রযুক্তির সহায়তায় একজন মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চ্যাটিংয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। সেই মেয়েকে ফারদিন তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো লাগা-মন্দ লাগার কথা শেয়ার করতেন।
ফারদিন হতাশা ও টাকার জন্য নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করে তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অন্যদিকে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সরাসরি ‘আত্মহত্যা’ না বলতে চাইলেও স্বেচ্ছায় ডেমরা সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন বলে দাবি করেছে।
গত ৪ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে রাজধানী ডেমরার কোনাপাড়া নিজ বাসা থেকে পরীক্ষার কথা বলে বুয়েটের হলের উদ্দেশ্যে বের হয় ফারদিন। বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে ফারদিন সায়েন্সল্যাব মোড়ে তার পরিচিত একজনের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সেখান থেকে নীলক্ষেত ও ধানমন্ডিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরবর্তীতে সাতমসজিদ রোডে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।
রাত আনুমানিক ৮টার সময় ফারদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে তিনি রিকশাযোগে রামপুরার উদ্দেশ্যে গমন করেন। আনুমানিক রাত পৌনে ১০টার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ফারদিন রিকশা থেকে নেমে যান এবং কিছুক্ষণ রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ঘোরাফেরা করেন।
র্যাব জানায়, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যায়— পরবর্তীতে ফারদিন কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, পুরান ঢাকার জনসন রোড ও গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় গমন করেন।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়— রাত ২টা ১ মিনিটে (সিসিটিভি ফুটেজ টাইম ২টা ৩ মিনিট) যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা থেকে ফারদিনকে লেগুনায় উঠতে দেখা যায়। রাত ২টা ২০ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের অপর পাশে তারাবো বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লেগুনা থেকে নেমে যান ফারদিন।
র্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়— রাত ২টা ২৬ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের তারাবো প্রান্তে ফারদিনের অবস্থান ছিল। রাত ২টা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের প্রায় মাঝখানে আসে ফারদিন। এসময় তার মোবাইল নেটওয়ার্কও ব্রিজের ঠিক মাঝ বরাবর দেখা যায়। ব্রিজের তারাবো প্রান্ত থেকে সুলতানা কামাল ব্রিজের মাঝখান পর্যন্ত দূরত্ব ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার। রাত ২টা ৩৪ মিনিট ৯ সেকেন্ডে সুলতানা কামাল ব্রিজের রেলিং ক্রস করেন ফারদিন।
তিনি বলেন, রাত ২টা ৩৪ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর থেকে স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দেন ফারদিন। ঝাঁপ দেওয়ার পর রাত ২টা ৩৪ মিনিট ২১ সেকেন্ডে শীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে পড়েন ফারদিন। রাত ২টা ৩৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডে ফারদিনের মোবাইল সিম স্লটে পানি ঢুকে নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে যায়। এছাড়া রাত ২টা ৫১ মিনিটে ফারদিনের হাতের ঘড়িতে পানি ঢুকে অকার্যকর হয়ে পড়ে।
সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টসহ অন্যান্য সব সংশ্লিষ্ট আলামত বিবেচনায় র্যাবের তদন্তে বেরিয়ে আসে বুয়েটশিক্ষার্থী ফারদিন স্বেচ্ছায় সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করেন— যোগ করেন কমান্ডার মঈন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফারদিনের মৃত্যু সংক্রান্ত অন্য কোনো সূত্র/আলামত পাওয়া গেলে— তা বিবেচনায় নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, এটি একটি আত্মহত্যা। আমরা চিকিৎসকের (ময়নাতদন্তকারী) সঙ্গে কথা বলেছি— পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখেছি, সার্বিকদিক দেখে মনে হয়েছে, এটি আত্মহত্যার ঘটনা।
বুড়িগঙ্গা টিভি /জাগো নিউজ থেকে নেয়া
Leave a Reply