ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা দশ জয়ে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখে জিতে নিলো বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় ম্যচে উইন্ডিজদের মাত্র ১০৮ রানে শেষ করে, হেসেখেলে ২০ ওভার ৪ বলে সিরিজ তুলে নেয় টাইগাররা। জয়টা যে জানাই ছিল! তাই রান তাড়ায় টেনশন ছিল না। শেষ ওভারে তামিমের ফিফটি ম্যাচে এন দেয় টানটান উত্তেজনা।
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেয়া ১০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তামিম ইকবালের দল। এই ম্যাচ দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা ১০ জয় পেলো বাংলাদেশ।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে আর কোনো ম্যাচ হারেনি বাংলাদেশ। দশ নাম্বার জয়ে চলতি ওয়ানডে সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিজেদের করে নিলো তামিমরা। অধিনায়কের চাওয়ামতোই সিরিজের শেষ ম্যাচ রিল্যাক্স হয়ে খেলে টিম টাইগার।
এই ম্যাচে জয়ের জন্য ব্যাটারদের চেয়েও টাইগার বোলারদের কৃতিত্ব সবচেয়ে বেশি। উইন্ডিজদের মাত্র ১০৮ রানে আটকে দেয় নাসুম আহমেদ-মেহেদি হাসান মিরাজ। পরে ১০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অধিনায়ক তামিমের অপরাজিত ৫০ রানের পাশাপাশি, শান্তর ২০ এবং লিটনের অপরাজিত ৩২ রানে লক্ষ্যে পৌঁছে বাংলাদেশ।
এদিন টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন তামিম ইকবাল।
টাইগার বোলাররাও অধিনায়কের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করেন। প্রথম দশ ওভারে দেন মাত্র ২৬ রান। এরমধ্যে শেই হোপকে আউট করার সহজ সুযোগ পেয়েছিলেন নুরুল হাসান সোহান। তবে ক্যাচ এবং স্টাম্পিং মিস করেন তিনি।
এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে এসে উইকেট শিকার করেছেন ডানহাতি অফ স্পিনার মোসাদ্দেক। প্রায় এক বছর পর ওয়ানডে দলে ফিরে শিকার করেছেন উইন্ডিজ ওপেনার কাইল মায়ার্সকে। তিনি করতে পেরেছেন ১৭ রান।
এদিকে শেষ ম্যাচে অভিষেকে জাদু দেখানো নাসুম সেই ম্যাচে উইকেট না পেলেও এদিন বল হাতে নাস্তানাবুদ করেন উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের। ১০ ওভার বোলিং করে ৪ মেডেনে মাত্র ১৯ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট।
যার শুরু তিনে নামা শামারাহ ব্রুকসকে দিয়ে। ৫ রান করা ব্রুকসকে বোল্ড করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট শিকার করেন নাসুম। এরপর উইন্ডিজের আরেক ওপেনার হোপকেও ব্যক্তিগত ১৮ রানে ফেরান নাসুম। হোপ ফেরার পরের বলেই উইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরানকেও বোল্ড করেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
৪৫ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান রোভম্যান পাওয়েল ও ব্রেন্ডন কিং দলের বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেন। এই দুই ব্যাটসম্যান ২৪ রানের জুটি গড়েন। তবে এরপরেই ১৩ রান করা পাওয়েলকে ফেরান শরিফুল ইসলাম।
এরপর বল হাতে মিরাজ দেখাতে শুরু করেন নিজের জাদু। প্রথম ম্যাচে ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেওয়া মিরাজ এই ম্যাচেও নেন তিন উইকেট। ওয়ানডের বোলিং র্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে উঠে আসা মিরাজ ২৯ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট।
১১ রান করা ব্রেন্ডন কিংকে বোল্ড করে ফিরিয়ে যার শুরু। এরপর রোমারিও শেফার্ড ও আলজারি জোসেফকেও প্যাভিলিয়নের পথ দেখান মিরাজ। আরেক ব্যাটসম্যান আকিল হোসেন রান আউটের শিকার হয়ে ফেরেন।
৮৬ রানে ৯ উইকেট হারানো উইন্ডিজ যখন দলীয় শতরান স্পর্শ করতে পারবে কিনা এমন সংশয় দেখা যাচ্ছিল তখন শেষ উইকেটে গুড়াকেশ মোতিয়েকে নিয়ে ২২ রানের জুটি গড়েন কেমো পাল। মোতিয়ে ৬ রান করে মিরাজের বলে ফিরলেও কেমো পালের ২৫ রানের সুবাদে ১০৮ রান করে উইন্ডিজ।
সিরিজ জয়ে বাংলাদেশের লক্ষ্য ১০৯
গায়ানায় সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টাইগারদের আগ্রাসি বোলিংয়ের সামনে ১০৮ রানে অলআউট উইন্ডিজ। ৪ উইকেট মিরাজের, নাসুম নিয়েছেন তিনটা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১০৮ রানে অলআউট উইন্ডিজ খেলেছে ৩৫ ওভার।
ওপেনার কাইল মেয়ার্সকে ১৭ রানে ফেরালেন তাসকিনের পরিবর্তে একাদশে খেলা মোসাদ্দেক। সামারা ব্রুকসকে দুই অঙ্কে পৌছাতে দেননি এই সিরিজে অভিষেক হওয়া স্পিনার নাসুম আহমেদ, ওপেনার শাই হোপ বনেছেন নাসুমের দ্বিতীয় শিকার।
১৩ রানে রোভম্যান পাওয়েল কাটা পড়েছেন শরীফুলের পেসে। ১১ রান করা ব্রেন্ডন কিংয়ের উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। রান-আউট আখিল হোসেন।
আলঝারি জোসেফ, রোমারিও শেফার্ডের উইকেটও নিয়েছেন মিরাজ। উইন্ডিজ সফরে টেস্ট, টি-টোয়েন্টিতে ভরাডুবির পর প্রথমওয়ানডে জয়ে স্বস্তিতে থাকা বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজ জয়।
মিরাজের জোড়া আঘাত, ৯ উইকেট নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের
মিরাজকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হলেন রোমারিও শেফার্ড। ঠিক পরের বলেই কট বিহাইন্ড আলজারি জোসেফ। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে ফিরেছেন তিনি।
৮৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দিশেহারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ৭২ রানে নেই ৭ উইকেট
ব্রেন্ডন কিং ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গেলেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। যা হওয়ার, তাই হলো! মিস করে গিয়ে বোল্ড হলেন তিনি, ৪৪ বল খেলে ১৩ রান করে। ৭২ রান তুলতেই ৬ উইকেট নেই তাদের।
ঠিক পরের বলেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছে আরেকটি উইকেট। নতুন ব্যাটসম্যান কিমো পল ফাইন লেগ থেকে সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়েছিলেন, তবে স্ট্রাইক প্রান্তে সময়মতো ফিরতে পারেননি আকিল।
টানা দ্বিতীয় ম্যাচে রানআউট হয়ে ফিরলেন আকিল। ৭২ রানে দাঁড়িয়ে সপ্তম উইকেটটিও হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এবার শরিফুলের আঘাত, ধুঁকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
এবার আঘাত হানলেন শরিফুল। ফেরালেন পাওয়েলকে। ৬৯ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।ধীরগতির উইকেটে যে শট খেলা উচিত নয়, সেটিই খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন রোভম্যান পাওয়েল। গ্রিপ করা বলটা উঠেছে মিডউইকেটে, ভুল করেননি মাহমুদউল্লাহ।
৬৯ রানেই অর্ধেক উইকেট হারিয়ে ফেলল ক্যারিবীয়রা। পাওয়েল ফিরলেন ১৯ বলে ১৩ রান করে।
নাসুমের তৃতীয় আঘাত, ধুঁকছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
মুখোমুখি প্রথম বলেই রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। তবে গ্লাভসে লেগে বলটি গিয়ে ভেঙেছে স্টাম্প। নাসুম আহমেদ পেয়ে গেলেন তৃতীয় উইকেটও। এবার ১৪ বলের মধ্যেই পেয়ে গেলেন ৩ উইকেট।
৪৫ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নাসুমের দ্বিতীয় শিকার হোপ
সাই হোপকে দ্বিতীয় শিকার বানালেন নাসুম। আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছিলেন হোপ, স্লগ সুইপ করতে গিয়ে খাড়া আকাশে তুলেছেন বল। শর্ট মিডউইকেট থেকে একটু পেছনে গিয়ে ক্যাচ নিতে ভুল করেননি মোসাদ্দেক হোসেন। ৫ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৭.৪ ওভারে ৪৪/৩।
নাসুমের ঘূর্ণিতে ফিরলেন ব্রুকস
নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিতে বোল্ড হলেন শামার ব্রুকস। লাইন ধরে রাখা বলটি পুরোপুরি মিস করে গেছেন ব্রুকস। নাসুম পেয়েছেন প্রথম ওয়ানডে উইকেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছে ইনিংসে দ্বিতীয়টি, ৩৯ রানের মাথায়।
মায়ার্সকে ফেরালেন মোসাদ্দেক
মোসাদ্দেক হোসেনের বল ইনসাইড দ্য লাইনে খেলতে গিয়ে মিস করে বোল্ড হলেন কাইল মায়ার্স। ১১তম ওভারে এসে ব্রেকথ্রু পেল বাংলাদশ। মায়ার্স ফিরেছেন ৩৬ বলে ১৭ রান করে, ২৭ রানে প্রথম উইকেট হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে উইন্ডিজের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছে বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। প্রথম ওয়ানডে জিতে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে বাংলাদেশ। তাই আজই সিরিজ নিশ্চত করতে চায় টাইগাররা। তাসকিনের পরিবর্তে টাইগার একাদশে জায়গা পেয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন।
ওয়েস্টে ইন্ডিজের একাদশে এসেছে দুই পরিবর্তন। ফিরেছেন জোসেফ ও পল, বাদ পড়েছেন সিলস ও ফিলিপ।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান (উইকে), মেহেদি হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: নিকোলাস পুরান (সি,ডব্লিউকে), শাই হোপ, রোভম্যান পাওয়েল, শেমার ব্রুকস, ব্র্যান্ডন কিং, কাইল মায়ার্স, রোমারিও শেফার্ড, কিমো পল, গুদাকেশ মতি, আলজারি জোসেফ, আকিয়াল হোসেন।
Leave a Reply