বাঙালির স্বপ্নপূরণের উৎসবে বক্তৃতার মাধ্যমে পদ্মা সেতুর নতুন স্বপ্নের উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যতবারই হত্যা করো, জন্মাবো আবার; দারুণ সূর্য হবো, লিখবো নতুন ইতিহাস “
তিনি বলেন, “বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালির ইতিহাসের প্রতিটি বাঁক রঞ্জিত হয়েছে ত্যাগ-তিতীক্ষা আর রক্ত ধারায়। কিন্তু বাঙালি আবার সদর্পে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।”
উৎসবের এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতির উদ্দেশে তিনি বলেন, “আসুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক দিনে যে যার অবস্থান থেকে দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ নিই, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পবির্তন করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-কনক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলোদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িত আছে আমাদের আবেগ, সৃজনশীলতা, সাহসিকতা, সহনশীলতা এবং আমাদের প্রত্যয়, জেদ। যে জেদের কারণে আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর প্রতিটি স্তম্ভ স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
উৎসবের এই মুহূর্তে দেশের মানুষকে ‘স্যালুট’ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের সমর্থন আর সাহসেই তিনি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কঠিন কাজটি সম্ভব করতে পেরেছেন।
সেতু নির্মাণ কাজের সাথে যারা জড়িত ছিলেন, যারা এ প্রকল্পের জন্য বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে দিয়েছেন, সবার প্রতি তিনি জানান কৃতজ্ঞতা।
প্রধামন্ত্রী বলেন, “আপনারা সবাই জানেন, এ সেতু নির্মাণ করতে যখন আমরা যাই, অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়, মিথ্যা অপবাদ, দুর্নীতির অপবাদ দিয়ে একেকটি মানুষ, একেকটি পরিবারকে যে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে, আমার ছোট বোন শেখ রেহানা, আমার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আমার মেয়ে সায়মা, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, আমার অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা, পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছিলাম ড. মসিউর রহমানকে, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া… যারা এর সাথে জড়িত ছিল, তাদের ওপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়, তাদের পরিবারসহ যে যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে, আমি তাদের প্রতি সহমর্মিমতা জানাই।”
https://youtu.be/dYWhd7vnaEY
“শত প্রতিকূলতা স্বত্ত্বেও সেতু নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, সকল প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি পরামর্শক, ঠিকাদার, প্রযুক্তবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রিতি কৃতজ্ঞতা জানাই। “
দেশের সবচেয়ে বড় এ যোগাযোগ অবকাঠামোর উদ্বোধন উপলক্ষে পদ্মার দুই তীরের পাশাপাশি সারা দেশে শুরু হয় উৎসব। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হয়ে ঠিক ১০টায় মাওয়ায় আয়োজিত সুধী সমাবেশের মঞ্চে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
দুপুর ১২টার দিকে মাওয়া প্রান্তে ফল উন্মোচনের মাধ্যমে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সেখানে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। এর আগে তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেন।
উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। জাজিরার দিকে যাওয়ার পথে দুপুর ১২টা ১২ মিনিটের দিকে গাড়ি থামিয়ে নেমে যান প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতুতে দাঁড়িয়ে তিনি বিমান বাহিনীর মহড়া দেখেন। এরপর ১২ টা ২৬ মিনিটের দিকে তিনি আবার গাড়িতে ওঠেন। সেখান থেকে তিনি জাজিরা প্রান্তে পৌছান।
জাজিরা প্রান্তেও দুপুর ১২ টা ৩৮ মিনিটের দিকে ফলক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সেখানে মোনাজাত হয়।
প্রধানমন্ত্রী মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধন করে টোল দিয়ে গাড়িতে সেতু পার হন। যান অপর প্রান্তে। সেখানে আজ ভোর থেকে নেমেছে মানুষের ঢল। দক্ষিণের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ জড়ো হচ্ছে সেখানে। নানা রঙের টি শার্টে, নেচে গেয়ে সমাবেশে আসে মানুষ।
নিছক নদীর উপরে তৈরি সেতু। সে তো ভূ-ভারতে কতই রয়েছে। পদ্মা নদীর উপরে তৈরি সেতু সে হিসেবে ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু একটা সেতু যে একটা গোটা দেশের মানুষের আবেগকে এভাবে তুঙ্গে নিয়ে যেতে পারে, তা অভাবনীয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় শুক্রবার যেন বিনিদ্র রাত কেটেছে বাংলাদেশের।
২০১২ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে পদ্মা সেতু নির্মাণকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। শনিবার সকালে সেই সেতুর দুযার খুললেন তিনি।
এই সেতু বিদেশি ঋণ, আর্থিক সাহায্য দয়ার উপরে নির্ভরতা থেকে মুক্তি প্রতীক। কারণ এই সেতু তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের নিজের অর্থে।
খরস্রোতা পদ্মা এত দিন বাংলাদেশের দুই অংশের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছিল। আজ মুক্তি মিলল তার থেকে। পদ্মা সেতু একই সঙ্গে তাই একটি গোটা জাতির ভাবাবেগ। উন্নয়নের প্রতীক। আত্মমর্যাদার প্রতীক। সাধারণ মানুষের মধ্যে, পিছিয়ে পড়া এলাকায় উন্নয়নের সুফলকে ছড়িয়ে দেয়ার বার্তাও।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে পদ্মা সেতুর থিম সং মাথা নোয়াবার নয়, বাঙ্গালি যেহেতু; বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ, তুমি দিলে পদ্মা সেতু’ বাজিয়ে সুধী সমাবেশ শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব।
Leave a Reply