দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালীকে স্বাধীন একটি দেশ এনে দেয়াসহ নানা গৌরবময় অর্জন দলটির।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি সাফল্যই আওয়ামী লীগের অর্জন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফল ভাবে এগিয়ে চলেছে। তার হাত ধরেই পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এখনো সক্রিয়। বিএনপি ও তাদের দোসরদের মোকাবেলা করাই এখন চ্যালেঞ্জ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দল ও সরকার অনেকটাই অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে।
দেশভাগের পর ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়েই পশ্চিম পাকিস্তানের শোষনের মুখে পড়ে বাঙালী।এ অঞ্চলের রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বপ্নভঙ্গে আসে নতুন দল গড়ার তাগিদ।
বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, কোথাও কোন হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন সাহেবের রোজগার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়। এই সেই রোজ গার্ডেন, যেখানে ১৯৪৯ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রতিষ্ঠার ২২ বছরের মাথায় এ দলের নেতৃত্বেই সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির নীতিতে ১৯৫৫ সালেই দলের নাম থেকে বাদ দেয়া হয় মুসলিম শব্দটি। তবে সেই অবস্থান আওয়ামী লীগ কতখানি ধরে রাখতে পেরেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে ইতিহাসবিদদের।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, এটা ঠিক আওয়ামী লীগ অনেক ক্ষেত্রেই আপস করেছে। করতে হয়েছে হয়তো। কিন্তু এখনও যদি আমরা অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলি, এখনও যদি আন্যান্য দল ধর্মের কাছে যেভাবে আত্মসমর্পন করেছে বা রাজনীতি করে -সেসব কথা বলি, তাহলে দেখবো কিন্তু আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে তার মূল আদর্শ বিসর্জন দেয়নি।
ঐতিহ্যবাহী দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই সক্ষমতা নিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ক্ষমতার বাইরে গেলে্ই কেবল মিলবে দলের সাংগঠনিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দল আর সরকার এখন প্রায় অভিন্ন, যা নেতিবাচক, বলছেন তারা।
রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তার স্বকীয় অস্তিত্বটা আর বজায়ে রাখতে পারেনি। এটা সরকারের মাঝে বিলীন হয়ে গেছে। এবং রাষ্ট্র, সরকার দল একাকার হয়ে গেছে। এখান থেকে আওয়ামী লীগকে আলাদা করে খুঁজে পাওয়াটা বেশ মুশকিল।
দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করা এবং পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলের মত বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় আওয়ামী লীগের সাফল্যের পাল্লাই ভারী।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, আওয়ামী লীগ যেমন আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই একদিকে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সার্থকতা, সঢলতা এনে দিয়েছে, ঠিক তেমনি সরকার পরিচালনার মধ্য দিয়েও শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন যে আওয়ামী লীগ শুধু সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সফলতা অর্জন করে না, সরকার পরিচালনার মধ্য দিয়ে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তিসহ সার্বিক মুক্তি দিতে সক্ষম। এই দেশে পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এ দেশের যত অর্জন তার সব এসেছে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার দ্বারা।
১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। পরে, ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পর থেকে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে দলটি। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত করার পর, দলের বর্তমান লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাওয়া।
Leave a Reply