1. ashiqnur96@gmail.com : editor :
রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পাঁচ দশকের ব্যবধানে প্রথম কোনো পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগসহ ২৬টি দলের মতামত না চাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেনঃ সংস্কার কমিশন সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা সামনে এলে জনগণ তা মেনে নেবে নাঃ তারেক রহমান আজিমপুরে বাসা থেকে অপহৃত আট মাসের সেই শিশু উদ্ধার জুমার নামাজের খুতবার গুরুত্ব কেরানীগঞ্জে দেড় কোটি মুল্যের সরকারি জমি উদ্ধার ক্রীড়া সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইমন চৌধুরীকে সন্মাননা প্রদান অপহরণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র কারাগারে ঢালাও মামলার প্রবণতা বিব্রতকরঃ আইন উপদেষ্টা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলা বাতিল

জেনে নিন পদ্মা সেতু সম্পর্কে

  • সর্বশেষ আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০২২
উদ্বোধনের অপেক্ষায় পদ্মা সেতু। ছবিঃ সংগৃহীত

শত অনিশ্চয়তা, আলোচনা-সমালোচনা উপেক্ষা করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে গৌরবের প্রতীক পদ্মা সেতু। যে স্বপ্নকে বুকে লালন করে আসছিল এ দেশের মানুষ, সেটি এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তব। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু হচ্ছে ইতিহাসের একটি বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা আর পদ্মার প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে প্রায় সব কাজ শেষে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আলোকচ্ছটা।

যা নিয়ে এত আলোচনা, এত শোরগোল সেই পদ্মা সেতু সম্পর্কে এক নজরে দেখে নেয়া যাক-

প্রকল্পের অবস্থান: রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। দেশের মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় প্রকল্পের অবস্থান। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হয়েছে। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে এই সেতুর মাধ্যমে।

যেভাবে শুরু: ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই সেতু হবেই। পরে ১৯৯৮ সালে পর্যন্ত প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাই হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতু নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয় এবং সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়।

একনেক সভায় অনুমোদন: প্রথমে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ে। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারো আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর পুরো টাকাই সরকারি অর্থায়ন।

পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া: পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ অঙ্গীকার করেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু অনিয়মের মিথ্যা অভিযোগ তুলে এই অঙ্গীকার থেকে সংস্থাটি সরে যায়। এ ধরনের কাজের শর্ত অনুযায়ী মূল ঋণদাতা চলে গেলে চলে যায় অন্যরাও। কাজেই একে একে এডিবি, জাইকা ও আইডিবিও চলে যায়। পরবর্তীতে দুর্নীতি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এই ঘটনায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেয়া হয় ও সচিব মোশাররফ হোসেন ভ‚ইয়াকে জেলেও যেতে হয়েছিল।

পরবর্তীতে এমন কোনো অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় কানাডিয়ান আদালত পরবর্তীতে মামলাটি বাতিল করে দেয়। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এইরকম-এর ডিজাইনে পদ্মা নদীর ওপর বহুমুখী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প ‘পদ্মা বহুমুখী সেতুর’ নির্মাণকাজ ২০১১ সালে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়।

নির্মাণ কাজ শুরু: ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ শুরু হয়৷ ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর নির্মাণ উদ্বোধন করেন৷ এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে তিন হাজার ২০০ টন ওজনের স্প্যান বসানো শুরু হয়। সেই থেকে তিন বছর দুই মাস ১০ দিনে বা মোট ১১৬৭ দিন পর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর সবশেষ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পুরো পদ্মা সেতু। দৃশ্যমান হয় সেতুর পুরো ৬ হাজার ১৫০ মিটার।

যা আছে পদ্মা সেতুতে: পদ্মা সেতুর প্রকল্পের নাম ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প’। এ সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে থাকবে একটি একক রেলপথ। এ প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এই সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি।

এতে থাকবে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পরিবহন সুবিধা। পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে। এর প্রস্থ হবে ৭২ ফুট, এতে থাকবে চার লেনের সড়ক, মাঝখানে থাকবে রোড ডিভাইডার। এর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটর, ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি।

বোনকে সাথে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ্মাসেতু পরিদর্শন: ছোট বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর স্বপ্নের পদ্মা সেতু পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর নিয়ে পদ্মা সেতুতে পৌঁছান। ৭ থেকে ১৮ নম্বর পিলার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার পথ তিনি ছোট বোনসহ অন্যান্যদের নিয়ে হাঁটেন। এরপর গাড়িতে চড়ে তিনি সেতু পার হয়ে জাজিরা প্রান্তে সার্ভিস এরিয়া-২ এ নাস্তা করেন। পদ্মা সেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা নাস্তার আয়োজন করেন।

প্রথমবারের মতো আলোকিত পদ্মাসেতু: গত ১৪ জুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সবগুলো বাতি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে পুরো পদ্মাসেতু আলোকিত হয়।ওই দিন প্রথম একসঙ্গে জ্বলে উঠে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুতে থাকা ৪১৫টি বাতি। এর মধ্য দিয়ে দুই প্রান্তসহ মাঝ পদ্মায়ও আলোয় ঝলমলে করে উঠে পদ্মা সেতু।

সেতুতে থাকা ১৭৫ ওয়াটের প্রতিটি এলইডি লাইটের একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব সাড়ে ৩৭ মিটার। সহ্য করতে পারবে ঘণ্টায় ২শ কিলোমিটার বাতাসের গতি। মূল সেতুতে ৩২৮টি এবং দুই প্রান্তের সংযোগ সেতুতে ৮৭টি লাইট রয়েছে। তবে চোখ ধাঁধানো পদ্মা সেতুর আর্কিটেকচারাল লাইটি স্থাপন হবে উদ্বোধনের পর।

যাদের প্রচেষ্ঠায় তৈরি পদ্মা সেতু: চ্যালেঞ্জ জয় করে স্বপ্ন আজ বাস্তব। মেহনতি ঘাম ও নিষ্ঠার গাঁথুনি যেন পদ্মাসেতুকে করেছে আরো মজবুত। আর এই স্বপ্নপূরণের পেছনে ছিলেন বাংলাদেশ, চীন ও ইউরোপের প্রায় ১২০০ প্রকৌশলী এবং ২০ হাজার শ্রমিক। জার্মানি থেকে হ্যামার, লুক্সেমবার্গ থেকে রেলের স্ট্রিংগার, চীন থেকে ট্রাস, অস্ট্রেলিয়া থেকে পরামর্শক; এমনিভাবে দেশ-বিদেশের প্রযুক্তি, মেধা ও শ্রমে পদ্মা সেতু আজ বাস্তব।

গাড়ি না থামিয়ে টোল দেয়ার ব্যবস্থা: টোল দিতে পদ্মা সেতুতে গাড়ি থামাতে হবে না। কারণ টোল বুথ পার হওয়ার সময়ে গাড়ির স্টিকার স্ক্যান করে টাকা কেটে নেয়া হবে টাচ ফ্রি বা ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমে। তবে পাশাপাশি থাকছে কার্ডে টাকা দেয়ার সুবিধা, রাখা হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিও। টোল ব্যবস্থাপনা, সফটওয়ারসহ আধুনিক সব ব্যবস্থা নিয়ে আসছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন।

পদ্মাসেতুর বিশ্ব রেকর্ড: চল্লিশ তলার সমান পাইলিং, দশ হাজার টনের বেশি ধারণ ক্ষমতার বেয়ারিং আর নদী শাসনে এ মেগা স্ট্রাকচার গড়েছে বিশ্ব রেকর্ড। আর এ কারণেই পৃথিবীর অন্য সেতুর তুলনায় বৈশিষ্ট্য অন্যন্য করেছে পদ্মা সেতুকে। খরস্রোতা পদ্মার মাটির ১২০-১২৭ মিটার গভীরে গিয়ে বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুর পাইল। যা চল্লিশ তলার সমান। এর আগে পৃথিবীর অন্য কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে গিয়ে পাইল বসাতে হয়নি। যা একটি রেকর্ড।

পরের রেকর্ডটি ব্রিজে ব্যবহৃত ক্রেন। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি আনা হয়েছে চীন থেকে। ‘তিয়ান ই’ নামের ক্রেনটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ।

পিলার এবং স্প্যানের মধ্যে যে পেন্ডুলাম বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে তার ওজন ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। পৃথিবীতে এর আগে কোনো সেতুতে এমন বড় বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি।

তৃতীয় রেকর্ড নদী শাসন। পদ্মা সেতুতে দুই দিকে ১৪ কিলোমিটার নদী শাসনের যে কাজটি আছে, সেটি বিশ্বে সর্বোচ্চ। ১৪ কিলোমিটার (১.৬ মাওয়া ১২.৪ জাজিরা) এলাকা নদী শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এই নদী শাসনে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি।

পদ্মা নদীর গতিপ্রকৃতি ও বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় এখানে যেকোনো সেতু নির্মাণ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল।

সেই পদ্মার বুকেই আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের সেতু। দেশি বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে মাথা তুলে পূর্ণ রূপ পেয়েছে পদ্মা সেতু৷ পদ্মার প্রবল স্রোত উপেক্ষা করে প্রায় সব কাজ শেষে আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

আপনি সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো সংবাদ
    © ২০২৪ বুড়িগঙ্গা টিভি কর্তৃক সর্বসত্ব সংরক্ষিত।
 
Theme Customized By BreakingNews