আজ রানা প্লাজা ধসের নয় বছর। তবে এই দীর্ঘ কয়েক বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি সাভারের রানা প্লাজা ধ্বসের মর্মান্তিক ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা। প্রায় ৬শ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে মাত্র একজনের। মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় পরস্পরকে দুষছে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ঝুলে ছিল মামলাটি। তবে আসামিপক্ষের অভিযোগ, অযথা আসামি ও সাক্ষীর সংখ্যা বাড়ানোয় মামলায় সময় লাগছে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে সাভারের বহুতল ভবন রানা প্লাজা। বিশ্ব-ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ সে শিল্প-দুর্ঘটনায় মারা যায় ১ হাজার ১৩৮ পোশাক শ্রমিক। আহত হন দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিক।
এদিকে রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে দিনটি স্মরণ করেন নিহতদের স্বজন ও আহত শ্রমিকসহ নানা সংগঠন।
রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা, রানা প্লাজার ট্রাজেডির মূল অভিযুক্ত সোহেল রানার বিচার দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন।
পাশাপাশি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনসহ ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান।
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মোট ১৪টি মামলা হয়, যার মধ্যে ১১টি হয় শ্রম আদালতে। এছাড়া, অবহেলা ও ত্রুটিজনিত হত্যা এবং ইমারত নির্মাণ আইনে হয় দুটি মামলা।
হত্যা মামলায় ২০১৫ সালে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরের বছর শুরু হয় আনুষ্ঠানিক বিচার।
তবে, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ৫ বছর বন্ধ ছিল বিচারকাজ। ফলে, মামলার ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে মাত্র একজনের।
এ মামলার ৪১ আসামির মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। শুধু ভবন মালিক সোহেল রানা ছাড়া বাকিরা জামিনে আছেন।
আসামিপক্ষের দাবি, বেশি মানুষকে আসামি এবং শত শত মানুষকে সাক্ষী করার কারণে দীর্ঘায়িত হয়েছে মামলা।
এদিকে, দুদকের করা দুর্নীতির মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানাকে এরই মধ্যে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে বিচারিক আদালত।
ধসের ৯ বছর পার হলেও এখনো ভয়াবহ সেই স্মৃতি থেকে বের হতে পারেননি অনেকে। এমনকি এখনো তেমন আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। করা হয়নি পুনর্বাসনও।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৮টা ছুইছুই ঘড়ির কাঁটা। হঠাৎ বিকট শব্দে ধসে পড়ে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বহুতল ভবন রানা প্লাজা। ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত কয়েকটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিল কয়েক হাজার শ্রমিক।
ভবন ধসের পরপরই ইট-পাথর আর কংক্রিটে চাপা পড়ে প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক। এদের মধ্য মারা যান ১ হাজার ১৩৮ জন। আর আহত প্রায় দুই হাজার।
ঘটনার পরই সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিহত শ্রমিকের পরিবার আর আহত শ্রমিকদের দেয়া হয় আর্থিক সহায়তা। পাশাপাশি রানা প্লাজার জমিতে তাদের পুনঃবাসনের ঘোষণাও দেয়া । কিন্তু আহত অনেক শ্রমিকের অভিযোগ, ৯ বছর পার হলেও তাদের পুনঃবাসনে হয়নি কোন ব্যবস্থা। ভবন মালিক অভিযুক্ত রানার এখনও সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ায় শ্রমিক নেতাদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ। রানা প্লাজার আহত শ্রমিকসহ নিহতদের স্বজনদের দ্রুত পুনঃবাসনের দাবি পোশাক শ্রমিকদের।
Leave a Reply