লক্ষ্মীপুরে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে সংর্বধনা দেয়ার অভিযোগে বরখাস্তের খবরে এক স্কুল শিক্ষককের মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই এই শাস্তির খবরেই মৃত্যু হয়েছে তার। তবে বিষয়টিকে দুঃখজনক বলছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
গত ২১ জানুয়ারি সদর উপজেলার পূর্ব চররুহিতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি বিধি মেনে মা সমাবেশ ও করোনা প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সভা চলছিল। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহফুজুর রহমান। এ ঘটনাকে সংবর্ধনা সভা বলে অভিযোগ পান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুনছুর আলী চৌধুরী। তবে কোন কারণ দর্শানো নোটিশ না দিয়েই ৩১ জানুয়ারি বিকেলে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার মোর্শেদকে সাময়িক বরখাস্ত করেন তিনি। এখবর শুনে রাত ৮টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতাল মারা যান তিনি। মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আনোয়ার হোসেন মোর্শেদকে।
বিষয়টিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজন ও সহকর্মীরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন তারা।
এলাকাবাসী জানান, এর আগেও ওই কর্মকর্তার মানষিক নির্যাতনে আরো দুই শিক্ষক হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান।
নিহতের বড় ছেলে জামিল মাহমুদ বলেন, আত্মপক্ষ সমর্থন ও কোন কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই তড়িঘড়ি করে মিথ্যা ঘটনাকে সত্য বানিয়ে পরিকল্পিতভাবে প্রতিবেদন তৈরি করে বাবাকে শাস্তি দেয়া হয়। এখবর শুনে হাসপাতালে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মারা যান তিনি। এঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন ছেলে জামিল মাহমুদ।
সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও শাকচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, আনোয়ার মোর্শেদ ছিলেন ভালো মানের একজন প্রধান শিক্ষক। তার এইভাবে মৃত্যু হবে, সেটা কল্পনা করা যায়না। এর আগেও জেলা শিক্ষাকর্মকর্তার মানসিক নির্যাতনে আরো দুই শিক্ষককের মৃত্যু হয়।
তবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, চেয়ারম্যানকে কোন সংবর্ধনা দেয়া হয়নি। উল্টো প্রধান শিক্ষককে এই শাস্তির বিষয়টি লজ্জাজনক। এটি কোনভাবে মেনে নেয়া যায়না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের নিকট জোর দাবি করেন তিনি।
সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ও জজকোর্টের আইনজীবি রহমত উল্যাহ বিপ্লব বলেন, যেভাবে প্রধান শিক্ষককে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এটি আইনগতভাবে হয়নি। কাউকে শাস্তি দেয়ার আগে তাকে একাধিকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু এখানে সেটা মানা হয়নি। এটি অন্যায় হয়েছে।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সদর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আনোয়ার হোসেন মোর্শেদের বিরুদ্ধে তার সহকর্মীরা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ দিয়েছেন। সে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। সে আলোকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
এদিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুনছুর আলী চৌধুরী বলেন, অভিযোগের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি দু:খজনক ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। এছাড়া এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
Leave a Reply