কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে তার স্বামী নোবেল ও তার বাল্য বন্ধু ফরহাদ মিলে গলাটিপে হত্যা করে বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া পুলিশের ৩ দিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানতে পারে যে তারা দুজন সরাসরি হত্যায় জড়িত । এছাড়া আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে বলে জানান ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হুমায়ূন কবির। শুক্রবার দুপুরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে অভিনেত্রী শিমু ও তার মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণেই এই হত্যাকাÐ বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান আসামিরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হত্যার দায়স্বীকার করে নোবেল ও ফরহাদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ আদালত। বর্তমানে আসামীরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে হুমায়ুন কবির বলেন, ১৬ জানুয়ারী সকালে ৭ থেকে ৮টার দিকে নোবেলের গ্রীন রোডের বাসায় হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ার কিছু সময় আগে সেখানে উপস্থিত হন নোবেলের বাল্যবন্ধু ফরহাদ। তাদের প্রায় ৪০ বছর ধরে সম্পর্ক । বর্তমানে বেকার থাকায় মাঝে মধ্যে সে বন্ধু নোবেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলতেন। ১৬ জানুয়ারী সকালে ২ হাজার টাকা নিতে ফরহাদ নোবেলের বাসায় উপস্থিত হন। এসময় ফরহাদকে চা দেন শিমু। তিনি ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে পাশের বেডরুমে নোবেল ও শিমুর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। হৈচৈ শুনে ফরহাদ ড্রয়িং রুম থেকে বেড রুমে যান। এসময় মেজাজ হারিয়ে শিমুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নোবেল। সেখানে ফরহাত উপস্থিত হলে নোবেল তাকে সহায়তা করতে বলে। ফরহাদ ছিলেন নোবেলের বাধ্যগত। এজন্য সে নোবেলের কথামতো শিমুকে চেপে ধরে। এরপর দুজন মিলে গলাটিপে হত্যা করে শিমুকে। হত্যা শেষে লাশ গুম করার জন্য শিমুর ব্যবহৃত গাড়ীতে মরদেহ তোলা হয়। এরপর সেই গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন দুজন। সারাদিন উত্তরা মিরপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও গাড়ী থেকে লাশ ফেলার সুযোগ পায়নি। পরে তারা আবার গ্রীনরোডের বাসায় চলে আসেন। এরপর সন্ধ্যায় আবার গাড়ী নিয়ে বের হন। ঘুরতে ঘুরতে রাত সাড়ে ৯টা দিকে চলে আসেন কেরানীগঞ্জের হযরতপুরের আলীপুর ব্রীজের কাছে। ব্রিজের উত্তর পাশের জায়গাটা নির্জন এবং লোকজনের উপস্থিতি না থাকায় সেখানে ঝোপের মধ্যে লাশ ফেলে তারা গাড়ী নিয়ে যান। পরদিন (১৭ জানুয়ারী) এলাকাবাসীর কাছে খবর পেয়ে সকালে বস্তাবন্দি অবস্থায় অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। পরে ওই নারীর ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে জাতীয় তথ্য ভান্ডারের সহায়তায় তার পরিচয় সনাক্ত করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে বেসরকারি একটি টেলিভিশনে মার্কেটিং বিভাগে চাকরি নেন শিমু। নোবেলের সন্দেহ ছিল সেখানকার এক কর্মকর্তার সঙ্গে শিমুর সম্পর্ক রয়েছে। এনিয়ে দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকতো। সেই কলহের জের ধরেই শিমুকে হত্যা করে নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদ। সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ছালাম মিয়া।
Leave a Reply