জনপ্রিয় সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র সিরিজের স্রষ্টা ও সেবা প্রকাশনীর প্রধান কাজী আনোয়ার হোসেন আর নেই। বুধবার বিকাল ৫টায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মারা যান তিনি।
কাজী আনোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ এবং সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মাইমুর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে মাসুদ রানার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মাসুমা মাইমুর তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘নিভে গেছে দীপ জনমের তরে জ্বলিবে না সে তো আর।- দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে আমার ছেলেটা। আমার ছোট্ট ছেলেটা। আর কোনওদিনও আমার পিছু পিছু ঘুরে খুঁজবে না মায়ের গায়ের মিষ্টি গন্ধ। কোনওদিনই না। কিন্তু মাকে ছেড়ে থাকবে কীভাবে ওই অন্ধকার ঘরে আমার ছেলেটা? একা- শুধু একা? কী সব বকছি জানি না।
আব্বা ( কাজী আনোয়ার হোসেন) আর নেই। চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে।
ইন্না-লিল্লাহ ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন।
গত অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। মাঝে পাঁচ বার হসপিটালাইজড ছিলেন। চিকিৎসার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। একটা ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্টএটাক হয়ে সব শেষ হয়ে গেল। ১০ ই জানুয়ারি থেকে লাইফ সাপোর্ট এ ছিলেন। আজ চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। বিস্তারিত পরে জানাব। আপাতত মোবাইল অফ করে দিচ্ছি।ইনবক্সে নক না দেবার অনুরোধ রইল’
মাসুদ রানার স্রষ্ঠা কাজী আনোয়ার হোসেনের আরেকটি অনবদ্য চরিত্র কুয়াশা, অনুবাদও করেছেন প্রচুর। সেবা প্রকাশনীর মতো একটা বড় প্রকাশনা দাড়ঁ করিয়ে বাংলার অনেক তরুণদের বই পড়া শিখিয়েছেন, বিদেশের অজস্র থ্রিলার চিনিয়েছেন বাংলার পাঠকদের।
সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসাবে তিনি ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামে গুপ্তচর চরিত্রকে সৃষ্টি করেন। এর কিছু আগে কুয়াশা নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নিয়েছিল। কুয়াশা চরিত্রটি নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন প্রায় ৭৬টির মতো কাহিনী রচনা করেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম ব্যবহার করে থাকেন।
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাক নাম ‘নবাব’। তার পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন।
তারা ছিলেন ৪ ভাই, ৭ বোন । ঢাকা মেডিকেল কলেজের পূর্ব সীমানায় উত্তর ও দক্ষিণ কোণে যে দুটি দোতালা গেস্ট হাউজ আজও দেখা যায়, সেখানেই উত্তরের দালানটিতে আনোয়ার হোসেনের ছেলেবেলা কেটেছে। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বাড়ি বদল করে তারা দক্ষিণ দিকের গেস্ট হাউসে চলে আসেন।
Leave a Reply