সৌরভ সোহরাব, সিংড়া(নাটোর) প্রতিনিধিঃ শস্য ভান্ডার নামে খ্যাত চলনবিল অঞ্চল এখন বোরো ধান রোপণের ভরা মৌসুম।
কৃষি প্রধান এই অঞ্চলে শাক-সবজি,সরিষা ও ভুট্রার চাষ হলেও অর্থকরী ফসল হিসাবে বোরো ধানই একমাত্র ভরসা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকেই বোরো চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করে রেখেছিল কৃষক। এখন শুরু করেছেন চারা রোপণ। বীজতলা থেকে চারা তোলা, হাল চাষ, মই টানা, সার প্রয়োগ, পানি সেচ, শ্রমিকদের কাজের জোগান দেওয়া সহ কৃষকদের ব্যস্ততার শেষ নাই।
চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া,ইটালী ও চৌগ্রামের কয়েকটি মাঠে সরেজমিনে গিয়ে কৃষকরে এই ব্যস্ততার চিত্র দেখা যায়। এসব মাঠে স্থানীয় ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা দলবেঁধে কাজ করছেন। কর্ম ব্যস্ত কৃষক ও শ্রমিকরা মাঠেই খাচ্ছেন দুপরের খাবার। কৃষি অফিস জানায়, এই অঞ্চলে জিরাশাইন যা স্থানীয় ভাবে মিনিকেট নামে পরিচিত ধানের চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এছাড়া সম্পা কাটারী, ব্রি-২৯,ব্রি-৮১,ব্রি-৮৯,ব্রি-৯২,ব্রি-৮৬ সহ বিভিন্ন জাতের ধানের চাষও করেন কৃষক।
কৃষকরা বলছেন তেল,সারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবছর তাদের খরচটা গতবারের চেয়ে বেশি হচ্ছে। উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের আয়েশ গ্রামের কৃষক আব্দুল জোব্বার ও মতিন ফকির জানান, এবছর তেল ও সারের দাম বাড়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরীও বেড়েছে। কৃষিবান্ধব এই সরকারের কাছে ধানের ন্যায্য দাবি করেন তাঁরা। একই গ্রামের বর্গাচাষী আব্দুল খালেক জানান, আমি জমি লিজ নিয়ে বোরো চাষ করি। প্রতি বিঘা জমি লিজ বাবদ ৮ হাজার টাকা সহ মোট খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘা জমিতে ধান পাই ২৫মণ থেকে ২৬মণ। শ্রমিকদের ধান কাটা মাড়াই খরচ বাদে ধান ঘরে উঠে ১৮ থেকে ২০মণ। ধান কাটার মৌসুমে যদি ধানের দাম মণ প্রতি ১হাজার থেকে ১ হাজার ২শত টাকা পাই তাহলে লাভের মুখ দেখা যায়। কিন্তু আমরা ওই সময়ে ধানের দাম পাই প্রতিমণ ৭শত থেকে ৮ শত টাকা। যার কারনে প্রতিবছর আমার মত বেশির ভাগ বর্গাচাষীরাই বোরো ধান চাষ করে লাভের চেয়ে লোকসানের মুখে পড়েন।
ইটালী ইউনিয়নের সাতপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক রইচ উদ্দিন জানান, আমার ৩০ বিঘা জমির মধ্যে ১৮ বিঘা রোপণ হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগামী ১সপ্তাহে সব জমির ধান রোপণ শেষ হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ মোঃ সেলিম রেজা বলেন, চলতি মৌসুমে সিংড়া উপজেলায় ৩৫ হাজার ৮শত ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ জমিতে চারা রোপণ শেষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আগামী দুই সপ্তাহে বাকি জমির বোরো রোপণ কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।
Leave a Reply