দেশের আইসিটি খাতের পণ্যকে বর্ষ পণ্য হিসেবে ঘোষণার মধ্য দিয়ে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই মেলা উদ্বোধন করেন তিনি।
এ বছর রাজধানীর উপকণ্ঠে নতুন শহর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে প্রথমবারের মতো মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হয়েছে।
এবারের মেলায় রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী রপ্তানিকে উৎসাহিত করতে আইসিটি পণ্য ও সেবাকে ২০২২ সালের প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার হিসেবে ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। মেলা উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্য মেলার নতুন জায়গায় প্রথমবার কিছু সমস্যা থাকলেও ব্যবসায়ীদের সাশ্রয় হয়েছে বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর দেশে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশে উদ্যোক্তা তৈরিতে অবদান রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সময়ে দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছিলো। কিন্তু ৭৫ এর পর দেশের অগ্রযাত্রা থেমে যায়।
৯৬ এ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জোর দেয়। দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি সব খাতকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। শুল্ক মুক্ত বিভিন্ন পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়া হয় সেসময়ই। কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হয়। শিল্প বাণিজ্যে উৎপাদন বৃষ্টির পাশাপাশি রপ্তানিতে জোর দেয়া হয়। বিশ্বে বাংলাদেশের নিজস্ব বাজার সৃষ্টিতেও গুরুত্ব দেয়া হয়।
পরে করোনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনায় বিশ্বের বহু দেশের মতো সমস্যায় পড়লেও বাংলাদেশের সার্বিক রপ্তানি বেড়েছে। এসময় ব্যবসায়ীদের জন্য নানা সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। প্রণোদনাসহ ব্যাংক ঋণেও ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।
দেশের রপ্তানি পণ্যের প্রবৃদ্ধি ও বাজার বৈচিত্রের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবং অন্যান্য সহায়ক সংস্থা এই মেলার আয়োজন করছে।
দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন ও উৎপাদনে সহায়তা দেয়ার লক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল হতে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারই প্রথমবারের মতো স্থায়ী কমপ্লেক্সে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগে আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হতো। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হলে সব স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে (সম্মুখ ও পেছনে) প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এবার মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কারপেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ-সামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি।
প্রতিদিন মেলা সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত (সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত)। মেলার প্রবেশ মূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকা, শিশুদের ২০ টাকা। মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে প্রতিদিন ৩০টি বিআরটিসি বাস ও অন্যান্য যাত্রীবাহী বাস চলাচল করবে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা। নামতে হবে কাঞ্চন ব্রীজ। সেখান থেকে ১০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে মেলা প্রাঙ্গনে যেতে হবে।
Leave a Reply