এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল ফিজি থেকে শুরু করে কাজাখস্তান পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ কাজগুলোকে প্রতিবছর স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। ২০২১ সালের ইউনেস্কো এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ডস ফর কালচারাল হেরিটেজ কনজারভেশনে ‘অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট’ জিতে নেয় জামে মসজিদটি। সংস্থাটির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অফিস থেকে গত ১ ডিসেম্বর অনলাইনে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইউনেস্কো জানিয়েছে, এ বছর ছয়টি দেশের নয়টি স্থাপনাকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন স্থাপনাও পেয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি।
কেরানীগঞ্জের কোন্ডা ইউনিয়নের দোলেশ্বর গ্রামে অবস্থিত দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদটি। তখনকার সময়ে জনসংখ্যার বিবেচনায় ছোট আকারেই এটির নির্মাণ করা হয়েছিল। এর পর মসজিদটি একাধিকবার সম্প্রসারণ করা হয়। তবে পুরনো হয়ে যাওয়ায় ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছিল পুরনো অবকাঠামো। কয়েক বছর আগে মসজিদটিকে সংস্কার করে পুরনো রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ জ্বালানী খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ইউনেস্কো পুরস্কার জেতার বিষয়ে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোক্তা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘কেরানীগঞ্জবাসীর জন্য এটি অবশ্যই আনন্দের। দেড়শ বছর আগে এ মসজিদটির সংস্কারকাজে আমাদের লক্ষ্য ছিল, পুরনোকে সঙ্গে নিয়ে নতুনের কথা বলা। আমরা মসজিদটির ঐতিহ্য রক্ষা করেই সংস্কার করেছি।’ তিনি বলেন, ‘দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ স্থাপনের সঙ্গে মিশে আছে আমাদের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আবেগ-অনুভূতি। আমরা কয়েক বছর আগে এর পাশে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি কিন্তু পুরাতনকে রেখে দিয়েছি ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবেই।’
মসজিদটির সংস্কারকাজের নেতৃত্ব দেন স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির জন্য তিনিই আবেদন করেছিলেন। সংস্কারকাজ নিয়ে এ স্থপতি বলেন, ‘২০১৮ সালে পুরনো এ মসজিদের সংস্কারকাজ শেষ হয়। এর পাশেই নির্মাণ করা হয় নতুন আরেকটি মসজিদ। পুরনো মসজিদটি এখন লাইব্রেরি এবং মক্তবে রূপান্তরিত হয়েছে।’
পুরনো স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগকে উৎসাহ দেয় ইউনেস্কো। সে জন্যই ২০০০ সাল থেকে চালু করেছে এ পুরস্কার। দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদটিকে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কো তার বিবৃতিতে বলেছে- এসব স্থাপনার মাধ্যমে ঐতিহ্যের যে বৈচিত্র্য ধরে রাখা হয়েছে, সেটি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এবার যেসব স্থাপনা পুরস্কার পেয়েছে সেগুলোতে রয়েছে টেকসই উন্নয়নের নানা দিক। পুরনো স্থাপনাগুলোর সংরক্ষণ ঠিকমতো হয়েছে কিনা, সেটি বিশ্লেষণ করে দেখে ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞ কমিটি। সে মানদ- পূরণ করতে পেরেছে দোলেশ্বর হানাফিয়া মসজিদ। দেড়শ বছর আগে চুন-সুরকি দিয়ে এ মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। পুরনো রূপ দেওয়ার জন্য এ আধুনিক যুগেও সংস্কার করতে হয়েছে চুন-সুরকি দিয়েই।
Leave a Reply