সৌরভ সোহরাব,সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতাঃ
মেধা,শ্রম ও চেষ্টা থাকলে কম পড়া- লেখা আর দরিদ্র পরিবার থেকেও যে সফলতা অর্জন করা যায় তারই এক দৃষ্টান্ত আদিবাসী কৃষক নিতিশ চন্দ্র সরদার ওরাওঁ। মাছ চাষ ও তরমুজ চাষে সফল এক কৃষক। আদিবাসী সফল এই কৃষকের বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার শুকাশ ইউনিয়নের চালা পাড়া গ্রামে। নিতিশ ওরাওঁ কিছু দিন আগে পাবদা মাছ চাষ করে সফল মাছ চাষী হিসাবে এলাকায় পরিচিত হয়েছেন। এখন আবার পরিচিত হচ্ছেন সফল তরমুজ চাষী হিসাবে। মাত্র ৭০ শতাংশ জমিতে বারোমাসী হলুদ তরমুজ চাষ করে অধিক লাভবান হওয়ায় নিতিশের এই পরিচিত এনে দিয়েছে। নিতিশের এই সাফল্য দেখে অনেক বেকার যুবক বাণিজ্যিক ভাবে শুরু করেছেন তরমুজ চাষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিতিশের খেতের মাচায় ঝুলছে তরমুজ। খেত জুড়ে শোভা পাচ্ছে হলুদ,কালো ও ডোরাকাটা তরমুজ। উচ্চ ফলনশীল বেবী, বাংলালিংক এবং গোল্ডেন ক্রাউন নামের তিন জাতের এই তরমুজ খেতে যেমন সুস্বাদু দেখতেও আকর্ষণীয়।
কৃষক নিতিশ জানায়, প্রথমে ফেসবুকের একটি ভিডিও দেখে বারোমাসী তরমুজ চাষের ধারনা পান তিনি। পরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতায় গত সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু করেন চাষ। জমি লিজ, মাচা তৈরীর দড়ি,গুনা,বাঁশ, বেড সহ অন্যান্য বাবদ ৭০ শতাংশ জমিতে তার মোট খরচ হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ দিনেই নিতিশের খেতের তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়। প্রথম দফায় ঢাকায় গিয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রয় করেন তিনি। প্রথম দফা বিক্রয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই আবারও বিক্রয়ের উপযোগী হয় খেতের তরমুজ।
কৃষক নিতিশ জানায়, প্রথম দফা তরমুজ বিক্রয় করে তার খরচের টাকা উঠে গেছে। এখনও দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ তার খেতে আছে। বাকি তরমুজ ঠিক ঠাক বিক্রয় করতে পারলে খরচ বাদে ২ লাখের বেশি আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।
বারোমাসী এই তরমুজ একই জমিতে তিনবার চাষ করা যায়। প্রথমবার মাচান ও বেড তৈরী করতে যে খরচ হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার খরচ হয় তুলনামূলক খুবই কম। সেই হিসাবে নিতিশের ওই ৭০ শতাংশ জমিতে খরচ বাদে বছরে আয় হবে ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা। এমনটাই স্বপ্ন দেখছেন কৃষক নিতিশ ওরাওঁ।
নিতিশের স্ত্রী অভিরন রাণীও কাজ করেন তরমুজের খেতে। বারোমাসী তরমুজ চাষের এই সফলতা স্বামী স্ত্রী দুজনারই। নিতিশের এমন সাফল্য এখন ছড়িয়ে পড়েছে লোকে মুখে। স্থানীয়দের কাছে একজন আদর্শ কৃষক হয়ে উঠেছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ মোঃ সেলিম রেজা বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার শুকাশ ইউনিয়নের জমি তুলনামুলক উচুঁ হওয়ায় বারোমাসী তরমুজ চাষের উপযোগী এই অঞ্চল। এখানে নিতিশের মত অনেক কৃষকই প্রথমবারের মত তরমুজ চাষ শুরু করেছেন। দেশে তিন জাতের বারোমাসী তরমুজের অনেক চাহিদা রয়েছে। যারা বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করছেন তারা লাভবান হচ্ছেন। আমরা চাষীদের পাশে আছি। চাষীদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি। এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply