কেরানীগঞ্জ মডেল থানার তারানগর ইউনিয়নের উত্তর বাহেরচরে তুরাগ নদের সঙ্গে মিলিত হওয়া বুড়িগঙ্গা নদীর চিহ্ন থাকলেও নদীর অংশটির বেশিরভাগই এখন দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। কিছু কিছু স্থানে খালের রুপ নেওয়া নদীর অংশ প্রভাবশালীদের দখলে নদীর কোন কোন স্থানে নির্মিত পাকা আধা পাকা বিভিন্ন স্থাপনা। দখলদাররা স্থাপনা নির্মান করেই থেমে থাকেনি, কেউ খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে ব্যক্তিগত রাস্তা তৈরি করেছে, কেউ আবার বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করেছেন। চলতি বর্ষা মৌসুমে তুরাগ নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তুরাগ নদীর পানি কেরানীগঞ্জের তারানগরের উত্তর বাহেরচর নিম্নস্থানে ডুকে পড়েছে আর নদের বেড়ে যাওয়া পানি গিয়ে ঢুকছে সোলাই মার্কেট খালে। কিন্তু খালের মধ্যে একাাধিক বাঁধ থাকায় পানি বাঁধাাগ্রস্ত হয়ে ঢুকে পড়েছে উত্তর বাহেরচর গ্রামে । পানিতে ডুবে গেছে গ্রামটি। গ্রামের ৩ শতাধিক পরিবার ১ মাস ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পানির কারনে গ্রামের মধ্যে যাতায়াতের মাটির রাস্তাগুলো ডুবে গেছে। অনেক জায়গার রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। পানির কারনে অনেক পরিবার বড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
সরজমিনে উত্তর বাহেরচর গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের কোথাও কোমর পানি আবার কোথাও বুক সমান পানি। পানিবন্দি অবস্থায় যারা এখনো সেখানে বসবাস করছেন তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। আসমা বেগম নামে এক গৃবধূর জানান, ১ মাস ধরে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। গত দুই বছর ধরে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। বর্ষাকাল আসলে খালের পানি বৃদ্ধি পেলে জোয়ারের পানি এসে ঢুকছে গ্রামে। বর্ষাকাল চলে গেলেও দুই তিন মাস লাগে এই পানি কমতে।
গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘরের মধ্যে বুক পানি। এজন্য ঘরের মধ্যে মাচা বেঁধে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকছি। পানির কারনে ঘর থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। প্রতিদিন নৌকায় চড়ে কাজে যাই। আবার কাজ থেকে আসার পর নৌকায় চড়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। এভাবে বসবাস ও যাতায়াত খুব কষ্টের। পানির মধ্যে থাকতে থাকতে অনেকের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোলাই মার্কেট খালের এক পাশে কেরানীগঞ্জ উপজেলা ও আরেকপাশে সাভার উপজেলা। সোলাই মার্কেট খালটি একসময় বুড়িগঙ্গা নদী ছিল। কালক্রমে এই অংশটি ভরাট ও সরু হয়ে নদীর অস্বিত্ব হারিয়ে খালে রুপ নিয়েছে। মোগড়াপাড়া মোড়ে খালের মধ্যে দুটি বাঁধ দিয়েছেন বাহার কোম্পানী নামে এক ব্যক্তি। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও খালে বাঁধ দিয়েছেন শহিদুল ও আলম নামে দুই ব্যক্তি। বাঁধের কিছুটা অদূরে খালের মধ্যে বাড়ি নির্মান করে ভাড়া দিয়েছেন কাস্টম কর্মকর্তা রুহুল আমিন। তিনি সেখানে থাকেন না। তবে বাড়ির দেখাশুনা করেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কাস্টম কর্মকর্তা রুহুল আমিন জমি কিনে এখানে বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়াও সাভারের আউয়াল মার্কেট এলাকায় খালের মধ্যে অসংখ্য স্থাপনা দেখা গেছে।
উত্তর বাহেরচর গ্রামটি কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের অন্তর্ভৃক্ত। পানিবন্দি এখানকার মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারানগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক বলেন, খালের এক পাশে কেরানীগঞ্জের উত্তর বাহেরচর অন্য পাশে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়ন। উত্তর বাহেরচর ভাকুর্তার চেয়ে অনেক নিচু। ফলে খালের পানি গিয়ে ঢুকছে উত্তর বাহেচরে। এতে এখানকার ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। খালটি দিয়ে যদি নিরবিচ্ছিন্নভাবে পানি চলাচল করতে পারতো তাহলে খালের পানি গ্রামে ঢকুতো না।
এব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, খাল নদী যারা ভরাট ও দখল করে তারা দুষ্কৃতীকারী। এদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা ও আইনী ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। তিনি আরও বলেন, শীঘ্রই আমরা খালটি পরিদর্শন করে নির্মিত বাঁধগুলো কেটে দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply