খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার দশহালিয়ায় বাঁধ মেরামতে নিয়োজিত মানুষের রোষের মুখে পড়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু। কপোতাক্ষ নদের পাড়ে বাঁধের একটি ভাঙা অংশ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতের কাজ করছিলেন। তারাই এমপি বাবুকে দেখে ক্ষেপে ওঠেন, চিৎকার করেন, কেউ কেউ কাদা ছুঁড়ে মারেন। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে এমপি আবারো সেখানে যান, জনতার উদ্দেশে কথা বলেন এবং তাদের সঙ্গে কাজও করেন। স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে স্বেচ্ছাশ্রমে কয়েক হাজার মানুষ কাজ করছিলেন। সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে একটি ট্রলার নিয়ে খুলনা-৬ আসনের (পাইকগাছা-কয়রা) এমপি মো. আক্তারুজ্জামান ও কয়রা থানার ওসিসহ আরো কয়েকজন সেখানে যান। কিন্তু কাজ করা জনতা এমপিকে দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কাদা ছুঁড়ে মারতে থাকেন ট্রলারের দিকে। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাদা ছোড়ার এক পর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে নদীর অপর পাড়ে চলে যায়। প্রায় আধাঘণ্টা পর তিনি আবার ওই ভাঙা বাঁধের কাছে যান। ইয়াসের পর ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের নোনা পানিতে। ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বুধবার ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নিয়মিত জোয়ারভাটা আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার দীর্ঘ এক যুগ পর আবার এমন দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী। গত চারদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন শত শত মানুষ।সেখানে উপস্থিত হয়ে এমপি তার বক্তব্যে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন এবং তিনি ওই মানুষদের সঙ্গে কাজে অংশ নেন। সেই সময় অনেক মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে যান। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড)-এর বেড়িবাঁধের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি। ঠিকাদারির সঙ্গে তার আস্থাভাজনরা যুক্ত। এ কারণে বাঁধের কাজ ভালো হয় না। সামান্য জোয়ারের পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙে যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটি অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার অবসান হয়। এমপি সাহের বাঁধের কাজের স্থানেই আছেন।
এমপি’র গায়ে কাদা ছোঁড়ার ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বাঁধের কাছে কেবল ট্রলার ভিড়েছে, এমন সময় এমপিকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো কাদা ছোঁড়া হচ্ছে। টিকতে না পেরে ট্রলার ফিরে যাচ্ছে। কাদা ছোঁড়ার পর ট্রলার ঘুরিয়ে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ট্রলার থেকে না নামলে বক্তৃতা দিলাম কীভাবে? তাদের সঙ্গে আমি খাওয়া দাওয়া করেছি। সেখানে ৫-৭ হাজার মানুষ ছিল। উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেকেই সেখানে ছিল। কাদা ছোঁড়াছুড়ির কিছু হয়নি।’
আসলে এলাকার লোকজন কাদা মেখে ছিল। কারণ ওই এলাকায় কাদা ছাড়া আর কিছু নেই। চারিদিকে শুধু পেরি কাদা। তারা চেয়েছিল আমি কাদা মাখি। এতে তারা খুশি হয়। সে কারণে আমার গায়ে কাদা। তারা যে আমার গায়ে কাদা ছুঁড়েছে, সে কারণে নয়,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি এলাকায় বেশি বেশি যাই, এতে আমার জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষ এরকম কথাবার্তা ছড়াচ্ছে।’
Leave a Reply