জয় দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ম্যাচ। শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ওয়ানডেতে ৩৩ রানে হারিয়ে ১০ পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে উঠে এলো চার নম্বরে।
৩০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান মেহেদী হাসান মিরাজের। ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।শেষ ব্যাটসম্যান দুশমন্থ চামিরাকে আউট করে বাংলাদেশকে ৩৩ রানের জয় এনে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
মুস্তাফিজকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় টাইমিং করতে পারেননি চামিরা। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমান মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। ২৫৭ রান তাড়ায় ২২৪ রানে থামে শ্রীলঙ্কা।
এর আগে হাসারাঙ্গার ঝড় থামান সাইফ। এই অলরাউন্ডারকে ফিরিয়ে ম্যাচ বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তাকে পুল করে ওড়াতে চেয়েছিলেন হাসারাঙ্গা। টাইমিং করতে পারেননি। মিড মিউইকেটে ক্যাচ মুঠোয় নেন আফিফ হোসেন। ভাঙে ৫৯ বলে ৬২ রানের জুটি।
২৪ বলে ৩ রান করা আশেন বান্দারাকে বোল্ড করে ওয়ানডেতে তৃতীয়বারের মতো চার উইকেট তুলে নেয় মেহেদী হাসান মিরাজ। মিরাজের স্পিনে স্বস্তিতে ফেরান বাংলাদেশকে।
টানা দুই ওভারে উইকেট পেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়ানডেতে স্পর্শ করলেন উইকেটের ফিফটি। পঞ্চাশ উইকেট পেতে ৪৮ ম্যাচ লাগল আইসিসি ওয়ানডে র্যাংঙ্কিংয়ে পাঁচ নম্বরে থাকা এই অফ স্পিনারের।
বাংলাদেশকে বেশ কয়েকবার ভোগানো ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে বোল্ড করে দ্রুত ফেরান মিরাজ। শাফল করে খেলতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। বল স্পিন করে তার প্যাডে ছুঁয়ে লেগ স্টাম্প স্পর্শ করে ফেলে দেয় বেল। ১৫ বলে ৯ রান করেন ধনাঞ্জয়া।
মিরাজের দ্বিতীয় শিকার কুসল। সহ-অধিনায়কের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকলেন না অধিনায়কও। দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে কুসল পেরেরাকে থামালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অ্যাঙ্গেলে ভেতরে ঢোকা বলের লাইন পুরোপুরি মিস করেন বাঁহাতি ওপেনার। উপরে যায় তার অফ স্টাম্প। অন্য ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকাকেও ফিরিয়েছিলেন মিরাজ। লঙ্কান অধিনায়ক স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে এক চারে ৫০ বলে করেন ৩০।
অন্যদিকে এক হাজার উইকেটের ঠিকানায় যেতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না সাকিব আল হাসানকে। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই কুসল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে ভাঙলেন জুটি। নিজের উইকেট সংখ্যা নিয়ে গেলেন চার অঙ্কে। ১৯তম ওভারের শেষ বলে সাকিবের ফুলটস ব্যাটে খেলতে পারেননি কুসল পেরেরা। জোরালো আবেদনে অম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা গেছে বল পিচ করত লেগ স্টাম্পের বাইরে। তাতে বোলিংয়ে দ্বিতীয় ও শেষ রিভিউটাও হারায় বাংলাদেশ।
প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ৯৯৯ উইকেট নিয়ে এই ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন সাকিব। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার উইকেট ৩৬২টি। টি-টোয়েন্টিতে ৩১০। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে মেন্ডিস তার ৩২৮তম শিকার। বাঁহাতি স্পিনারকে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন মেন্ডিস। একটু ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ঠিক মতো শট খেলতে পারেননি লঙ্কান সহ-অধিনায়ক। পয়েন্টে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ মুঠোয় নেন আফিফ হোসেন। ভাঙে ৪১ রানের জুটি। ৩৬ বলে দুই চারে ২৪ রান করে থামতে হয় মেন্ডিসকে। পাওয়ার প্লেতে শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যানকে ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। একটি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ২৫৮ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। মিরপুরে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫৭ রান তুলে নেয় তামিম ইকবালের দল।
মন্থর উইকেটে বাংলাদেশ শুরুতে রান তুলেছে ধীরগতিতে। তবে মুশফিক, রিয়াদ ও তামিমের ফিফটিতে ২৫৭ রানের লড়াইয়ের পুঁজি পায় টাইগাররা। ডেথ ওভারে আরেকটু আগ্রাসী ব্যাটিং করতে পারলে সংগ্রহ আরেকটু বড় হতেও পারত। আফিফ হোসেন ধ্রুব ২৩ বলে ২৭ ও সাইফউদ্দিন ৯ বলে ১৩ রানে অপরাজিত থেকে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ করেন।
স্বাগতিকদের লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়ার পেছনে বড় অবদান মুশফিকুর রহিমের। ৮৭ বলে ৮৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন মি. ডিপেন্ডেবল। সেঞ্চুরির দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন মুশফিক। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেট বিসর্জন দেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
শুরুর ৫০ রানে পৌঁছাতে বাংলাদেশের লেগেছে ১৩.৫ ওভার। শুরুতেই লিটন দাস (০) সাজঘরে ফেরায় বাংলাদেশ করতে পারেনি সাবলীল ব্যাটিং। তামিম ইকবাল একপ্রান্ত আগলে রাখলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনে ফেরা সাকিব আল হাসান। ৩৪ বলে ১৫ রান করে বিলিয়ে আসেন উইকেট।
দলীয় ৯৯ রানে ফিফটি করে ফেরেন তামিম (৫২)। মিঠুন (০) নেমেই আউট হয়ে যান। জোড়া ধাক্কার পর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ মিলে বাংলাদেশকে পথ দেখান। তাদের পঞ্চম উইকেট জুটির ১০৯ রানে হালে পানি পায় টিম টাইগার্স। ৫৪ রান করে মাহমুদউল্লাহ যখন আউট হন, তখন রান বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে। শেষ অবধি আফিফ-সাইফ জুটিতে আড়াইশ পেরোয় সংগ্রহ।
এরআগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে দুশ্মন্ত চামিরার বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন লিটন। তার ক্যাচটি প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে ধরেছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে এসেছেন সাকিব আল হাসান। তামিম ইকবালকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার। ভালোই খেলছিলেন সাকিব–তামিম। কিন্তু দুজনের জুটিটা খুব বেশি বড় হয়নি। ৩৮ রান তোলার পর ভেঙেছে তাদের জুটি। গুনাতিলকার বলে মাথার ওপর দিয়ে মারতে গিয়ে লং অনে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন সাকিব। ম্যাচ শুরু আগে আগেই করোনার ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। করোনা পজিটিভ এসেছিল লঙ্কান দলের তিন সদস্য—বোলিং কোচ চামিন্ডা ভাস ও দুই ক্রিকেটার ইসুরু উদানা ও শিরান ফার্নান্দোর।
লঙ্কান স্পিনার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ১০ ওভারে ৪৫ রানে দিয়ে পান ৩ উইকেট। দুশমন্থ চামিরা, গুনাথিলাকা ও সান্দাকান নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
Leave a Reply